মোদি-পুতিন বৈঠক: এস-৪০০ থেকে তেল বাণিজ্য, টেবিলে থাকছে যেসব ইস্যু

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে ২৩তম বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে আজ বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লি পৌঁছাচ্ছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এই হাই-প্রোফাইল সফরের ঠিক পূর্বমুহূর্তে দুই দেশের প্রতিরক্ষা সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি বড় খবর সামনে এসেছে। পুতিনের আগমনের ঠিক আগে রাশিয়ার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ‘স্টেট ড্যুমা’ ভারতের সঙ্গে ‘রেলোস’ (Reciprocal Exchange of Logistics Support) নামক একটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক চুক্তির অনুমোদন দিয়েছে। চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি স্বাক্ষরিত এই চুক্তিটি গত মঙ্গলবার চূড়ান্ত অনুমোদন পায়।

অনুমোদিত এই চুক্তির ফলে ভারত ও রাশিয়ার সামরিক বাহিনী একে অপরের লজিস্টিক্যাল সাপোর্ট বা রসদ সহায়তা আদান-প্রদান করতে পারবে। এর আওতায় উভয় দেশের সেনারা প্রয়োজনে একে অপরের সামরিক ঘাঁটি, আকাশসীমা ও বন্দর ব্যবহার করার সুযোগ পাবে। মূলত যৌথ মহড়া, প্রশিক্ষণ, মানবিক সহায়তা এবং ত্রাণ ও উদ্ধার অভিযানের ক্ষেত্রে এই সুবিধা কার্যকর হবে। এ প্রসঙ্গে স্টেট ড্যুমার স্পিকার ভ্যাচেস্লাভ ভোলোদিন মন্তব্য করেছেন যে, এই চুক্তি দুই দেশের কৌশলগত সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করবে।

রুশ প্রেসিডেন্টের সফরসূচি অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দিল্লি পৌঁছানোর পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাকে একটি ব্যক্তিগত নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানাবেন। গত জুলাইয়ে মোদির মস্কো সফরের আদলে আয়োজিত এই অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে দুই নেতা মূল আলোচনার রূপরেখা ও সুর ঠিক করে নেবেন। সফরের দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ শুক্রবার সকালে পুতিন রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এরপর হায়দরাবাদ হাউসে অনুষ্ঠিত হবে শীর্ষ সম্মেলন, যেখানে একটি কর্ম-ভোজের আয়োজনও থাকবে।

এবারের বৈঠকে প্রতিরক্ষা খাতের ঝুলে থাকা ইস্যুগুলো বিশেষ গুরুত্ব পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সামরিক সরঞ্জামের সরবরাহে যে বিলম্ব ঘটেছে, ভারত তা দ্রুত সমাধানের আহ্বান জানাবে। বিশেষ করে ২০১৮ সালে ৫০০ কোটি ডলারে কেনা এস-৪০০ মিসাইল সিস্টেমের বাকি দুটি স্কোয়াড্রন আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে পাওয়ার বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। এছাড়া ভারত পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান সু-৫৭ ক্রয়ের আগ্রহ দেখাতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ। শীর্ষনেতাদের বৈঠকের পাশাপাশি দুই দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ও আন্দ্রে বেলৌসোভ সামরিক হার্ডওয়্যার নিয়ে আলাদা দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন।

প্রতিরক্ষার পাশাপাশি জ্বালানি নিরাপত্তা ও ভূ-রাজনীতিও আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার চাপে রুশ অপরিশোধিত তেল আমদানিতে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে দুই নেতা কথা বলবেন। ইউক্রেন সংঘাত নিয়ে পুতিন তার অবস্থান ব্যাখ্যা করবেন এবং ভারত তার চিরাচরিত কূটনৈতিক ও সংলাপের ওপর জোর দেওয়া নীতি বজায় রাখবে। পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছেন, দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার পরিধি নির্ভর করবে ভারত কতটা এগিয়ে আসতে চায় তার ওপর। এমন এক সময়ে এই সফর অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন শুল্ক আরোপসহ বিভিন্ন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে।