পুতিন: মোদি চাপে নতি স্বীকার করার পাত্র নন
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ‘চাপের মুখে নতি স্বীকার করার মতো ব্যক্তি নন’ বলে মন্তব্য করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। নয়াদিল্লির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের চাপের মধ্যেই ভারত সফরের প্রাক্কালে তিনি এই মন্তব্য করেন। ২০২১ সালের পর এটিই হতে যাচ্ছে ভারতে পুতিনের প্রথম সফর।

দিল্লিভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পুতিন এসব কথা বলেন। যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আরোপ করে ভারতকে কোনোভাবে চাপে ফেলার চেষ্টা করছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে রুশ প্রেসিডেন্ট এই মন্তব্য করেন। তিনি তার ‘বন্ধু’ প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে দেখা করার বিষয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, ‘বিশ্ব ভারতের দৃঢ় অবস্থান দেখেছে এবং দেশটি তার নেতৃত্বের জন্য গর্ব করতে পারে।’
ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনার কারণে ওয়াশিংটন ভারতীয় আমদানির ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, মোদি তাকে আশ্বাস দিয়েছেন যে নয়াদিল্লি রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল কেনা বন্ধ করবে। বর্তমানে রাশিয়া ভারতের বৃহত্তম তেল সরবরাহকারী দেশ। তবে রুশ সংস্থাগুলোর ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে তেলের পরিমাণ কিছুটা কমেছে এবং ক্রেমলিন স্বীকার করেছে যে ভারতীয় আমদানি কেবল ‘স্বল্প সময়ের জন্য’ কমতে পারে।
নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে পুতিন সতর্ক করে বলেন, পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোকে বুঝতে হবে যে সার্বভৌম দেশগুলোর ওপর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টির প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত উদ্যোক্তাদের ওপরই বুমেরাং হয়ে ফিরে আসে। যারা তৃতীয় কোনো দেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপের চেষ্টা করে, তারা শেষ পর্যন্ত নিজেরাই সমস্যা ও ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
পুতিন বলেন, ‘আমি মনে করি, যখন এই বোধোদয় পুরোপুরি আসবে, তখন বাহ্যিক চাপ প্রয়োগের এই চর্চা বন্ধ হবে।’ মোদির নেতৃত্বে ভারত স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে যে তাদের সঙ্গে আর উপনিবেশের মতো আচরণ করা যাবে না বলে উল্লেখ করেন রুশ প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, ‘ভারত সরকারের প্রধান প্রধানমন্ত্রী মোদি এমন ব্যক্তি নন যিনি তার দেশের স্বার্থ বিসর্জন দেবেন।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘ভারতীয় জনগণ তাদের নেতাকে নিয়ে গর্ব করতে পারেন।’
পুতিন জোর দিয়ে বলেন, ‘আমাদের (ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে) অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনার আছে, কারণ ভারতের সঙ্গে সহযোগিতা অত্যন্ত ব্যাপক। আমাদের সম্পর্কের ইতিহাসের কথা আমি আলাদা করে বলছি না, কারণ আমাদের সম্পর্কের ইতিহাসের চরিত্র অনন্য ও বিশেষ।’ নিষেধাজ্ঞার চাপ সত্ত্বেও রাশিয়া ও ভারত অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি জানান, দুই দেশের মধ্যে ৯০ শতাংশ লেনদেন ইতিমধ্যে জাতীয় মুদ্রায় সম্পন্ন হচ্ছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে পুতিনের নয়াদিল্লিতে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। পুতিনের রাষ্ট্রীয় সফর উপলক্ষে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে বহুস্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে এবং ‘উচ্চ সতর্কতা’ জারি করা হয়েছে। প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন অনুযায়ী, কঠোর নজরদারি বজায় রাখতে ৫,০০০-এরও বেশি পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নয়াদিল্লিতে পৌঁছানোর পর মোদি রুশ প্রেসিডেন্টকে ব্যক্তিগত নৈশভোজে আপ্যায়ন করবেন। সফরের মূল কর্মসূচি শুক্রবার অনুষ্ঠিত হবে। এদিন রাষ্ট্রপতি ভবনে পুতিনকে আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনা দেওয়া হবে এবং এরপর তিনি ও মোদি ২৩তম ভারত-রাশিয়া বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনে সহ-সভাপতিত্ব করবেন। ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ১০ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য নিয়ে মস্কো ও নয়াদিল্লি একযোগে কাজ করছে। গত বছর দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য রেকর্ড ৬,৮৭০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে, যা মহামারি-পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় প্রায় ছয় গুণ বেশি। শুক্রবার সন্ধ্যায় দেশ ত্যাগের আগে রুশ প্রেসিডেন্ট ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গেও আলোচনা করবেন।
রাশিয়া কি আবারও জি-৮ জোটে ফিরতে চায় কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে পুতিন বলেন, তাদের এমন কোনো ইচ্ছা নেই। ২০১৪ সাল থেকে জি-৮ আবারও ‘জি-৭’ ফরম্যাটে কাজ শুরু করেছে। রুশ প্রেসিডেন্ট প্রশ্ন রাখেন, ‘জি-৭-এর দেশগুলোকে কেন গ্রেট সেভেন বলা হয় তা অস্পষ্ট। তাদের মধ্যে মহান বা দুর্দান্ত কী আছে?’ তিনি জোর দিয়ে বলেন, ক্রয়ক্ষমতার সমতার (পারচেজিং পাওয়ার প্যারিটি) দিক থেকে বিচার করলে বেশ কয়েকটি জি-৭ দেশের ওজন ভারতের মতো দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম। পুতিন যুক্তি দেন যে, যদিও জি-৭ দেশগুলোর অর্থনীতি উচ্চপ্রযুক্তি নির্ভর এবং শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে, তবুও বিশ্ব অর্থনীতিতে তাদের অংশীদারত্ব প্রতিবছরই হ্রাস পাচ্ছে।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.