প্রাথমিকের শিক্ষকদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত

শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনের কথা চিন্তা করে চলমান আন্দোলন থেকে আপাতত সরে এসেছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। বার্ষিক পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের ঘোষিত ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ বা সর্বাত্মক কর্মবিরতি কর্মসূচি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার পর আন্দোলনকারী শিক্ষকদের একজন নেতা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, কোমলমতি শিশুদের পরীক্ষার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে এই সাময়িক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর দাবি আদায়ে আবারও নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। রাতেই সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কর্মসূচি স্থগিতের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

এর আগে আন্দোলন দমাতে কঠোর অবস্থান নেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার ‘প্রশাসনিক কারণ’ দেখিয়ে বেশ কয়েকজন শিক্ষক নেতা ও সাধারণ শিক্ষককে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় বদলি করা হয়। একদিকে অভিভাবকদের ক্ষোভ এবং অন্যদিকে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপের প্রেক্ষাপটে শিক্ষকরা তাদের কর্মসূচি স্থগিতের এই সিদ্ধান্ত নিলেন।

গত কয়েক দিন ধরেই শিক্ষকদের আন্দোলনে দেশের প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে এসেছিল। বৃহস্পতিবার ছিল অচলাবস্থার চতুর্থ দিন। দেশের বহু বিদ্যালয়ে এদিন বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। শিক্ষকরা নিজেরাই বিদ্যালয়ের ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। কোথাও কোথাও স্থানীয় প্রশাসন পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সহায়তায় তালা ভেঙে পরীক্ষার আয়োজন করে। তবে উত্তরপত্র মূল্যায়ন নিয়ে শঙ্কা থেকেই গিয়েছিল।

শিক্ষকদের দাবির মধ্যে রয়েছে—সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল ১১তম গ্রেডে উন্নীত করা, চাকরির ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির জটিলতা নিরসন এবং সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি নিশ্চিত করা। বর্তমানে সহকারী শিক্ষকরা ১৩তম গ্রেডে বেতন পাচ্ছেন।

দাবি আদায়ে গত ২৭ নভেম্বর থেকে কর্মবিরতি পালন করছিল ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’। বুধবার থেকে তারা সর্বাত্মক শাটডাউন শুরু করে। এর আগে প্রায় অভিন্ন দাবিতে ‘সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ’ ২৩ থেকে ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করে এবং বৃহস্পতিবার থেকে বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার কর্মসূচি দেয়।

সারা দেশে বর্তমানে ৬৫ হাজার ৫৬৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে, যেখানে এক কোটিরও বেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। এসব বিদ্যালয়ে অনুমোদিত সহকারী শিক্ষকের পদ ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২১৬টি হলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন ৩ লাখ ৫২ হাজার ২০৮ জন শিক্ষক।