বিমান চলাচলে বিপর্যয়: নড়েচড়ে বসেছে ভারত সরকার

ভারতের বিমান চলাচলে যে ভয়াবহ অচলাবস্থা তৈরি হয়েছিল, তা নিরসনে অবশেষে নড়েচড়ে বসেছে সরকার। যাত্রীদের চরম ভোগান্তি ও ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ কমাতে কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিজিসিএ। শুক্রবার সংস্থাটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে বিমান উড্ডয়ন নীতিমালায় সাময়িক ও এককালীন ছাড় দেওয়া হচ্ছে।

টানা কয়েক দিন ধরেই ভারতের আকাশপথে অস্থিরতা বিরাজ করছে। শুক্রবার এক দিনেই ইন্ডিগোর ছয় শতাধিক ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে। এর আগের দিন বৃহস্পতিবারও সংস্থাটি সাড়ে পাঁচশ ফ্লাইট বাতিল করেছিল। শুক্রবার সকাল থেকেই ঘোষণা দেওয়া হয়, রাত ১২টা পর্যন্ত দিল্লি থেকে এবং সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চেন্নাই থেকে ইন্ডিগোর কোনো বিমান উড্ডয়ন করবে না। বারবার ক্ষমা চেয়েও যাত্রীদের ক্ষোভ প্রশমন করতে পারছে না তারা।

ইন্ডিগোর এই বেহাল দশার সুযোগে অন্য বিমান সংস্থাগুলোর টিকিটের দামও সাধারণের নাগালের বাইরে চলে গেছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, দিল্লি ও মুম্বাই রুটে যাতায়াতের ভাড়া ৬০ হাজার রুপি পর্যন্ত পৌঁছেছে। এই অস্বাভাবিক ভাড়া বৃদ্ধি এবং ফ্লাইট বাতিলে যাত্রীরা বিমানবন্দরে আটকা পড়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতেই মূলত ডিজিসিএ তাদের কঠোর অবস্থান থেকে সরে এসেছে।

পাইলট ও ক্রু সংকটের কারণে সৃষ্ট এই বিপর্যয় মোকাবিলায় ডিজিসিএ তাদের নতুন নির্দেশাবলিতে পরিবর্তন এনেছে। নতুন নিয়মে বলা হয়েছিল, পাইলটরা ছুটি নিলেও সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টা বিশ্রাম তাদের জন্য বাধ্যতামূলক। তবে সংশোধিত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, পাইলটদের নেওয়া ছুটির সময়টাকেও এখন থেকে ওই ৪৮ ঘণ্টা বিশ্রামের অংশ হিসেবে গণ্য করা যাবে। এছাড়া রাত ১টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত নাইট ল্যান্ডিং এবং সপ্তাহে এর সংখ্যা নিয়ে যে বিধিনিষেধ ছিল, তাও আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে।

চলতি বছরের নভেম্বরে এই নিয়মগুলো দ্বিতীয়বারের মতো বাধ্যতামূলক করার পরই বিমান চলাচল ব্যবস্থায় ধস নামে। মূলত পাইলট ও কেবিন ক্রুদের মানসিক অবসাদ ও ক্লান্তি দূর করে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমানোর লক্ষ্যেই ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে এসব নিয়ম তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু ইন্ডিগোসহ অন্যান্য বিমান সংস্থার আপত্তিতে তা এতদিন কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। এই ছাড়ের ফলে পাইলট সংকট কিছুটা কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ভারতের বৃহত্তম বিমান সংস্থা ইন্ডিগোর বহরে ৪১৭টি বিমান রয়েছে এবং তারা দৈনিক দেশে-বিদেশে ২ হাজার ৩০০টি ফ্লাইট পরিচালনা করে। প্রায় দুই বছর সময় পাওয়ার পরও সংস্থাটি কেন নতুন নিয়মের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেয়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ডিজিসিএ মনে করিয়ে দিয়েছে, যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দ্যের কথা বিবেচনা করেই এই ছাড় দেওয়া হয়েছে।

তবে এই শিথিলতা দীর্ঘস্থায়ী হবে না। ডিজিসিএ স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, এই বিশেষ ছাড় আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। এর মধ্যেই সংস্থাগুলোকে পরিস্থিতি সামলে নিতে হবে। একই সঙ্গে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে নতুন নিয়ম পুরোপুরি বাস্তবায়নের একটি সুনির্দিষ্ট রূপরেখা বা রোডম্যাপ জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং প্রতি ১৫ দিন অন্তর পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে বলা হয়েছে।