যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্কের মধ্যকার সব সমস্যা ৪-৬ মাসে সমাধানের আশা মার্কিন দূতের

তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার অমীমাংসিত সমস্যাগুলো আগামী ৪ থেকে ৬ মাসের মধ্যে সমাধান হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সিরিয়ায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত এবং তুরস্কে মার্কিন রাষ্ট্রদূত টম বারাক। তিনি দুই দেশের সম্পর্ককে শক্তিশালী ও স্থিতিশীল হিসেবে অভিহিত করেছেন। শুক্রবার সংযুক্ত আরব আমিরাতে মিলকেন ইনস্টিটিউটের এক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

মার্কিন এই দূত বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের মধ্যে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তিনি বলেন, ‘তাদের মধ্যে এক অসাধারণ বন্ধন রয়েছে, যা এই অংশীদারিত্বকে গড়ে তুলতে সহায়তা করেছে।’

বারাক উল্লেখ করেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পর ন্যাটোর দ্বিতীয় বৃহত্তম মিত্র হলো তুরস্ক। তবুও ইউরোপ তুরস্কের ইইউতে যোগদানের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেনি।

ইসরায়েল প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি দাবি করেন, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ‘গ্রেটার ইসরায়েল’ প্রতিষ্ঠার ধারণা নিয়ে এগোচ্ছেন না। বরং ইসরায়েল নানা দিক থেকে চাপের মুখে রয়েছে। তিনি বলেন, ‘সামরিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা নয়, বরং বাণিজ্য ও সমৃদ্ধির মাধ্যমেই এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবায়িত হতে পারে।’

এফ-১৬ ও এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান এবং কাটসা আইনের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে মার্কিন এই কর্মকর্তা বলেন, এ বিতর্ক এক দশক ধরে চলছে। তিনি জানান, ট্রাম্প এই নিষেধাজ্ঞাগুলোকে অর্থহীন মনে করেন এবং তুরস্কের প্রতিরক্ষা উৎপাদন সক্ষমতা ও ইউক্রেনে ড্রোন রপ্তানির বিষয়ে তিনি সচেতন।

যুক্তরাষ্ট্র তুরস্কে যুদ্ধবিমান সরবরাহ না করলেও তুরস্ক ইউরোফাইটার টাইফুন কিনেছে এবং এফ-৩৫ কর্মসূচির গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার রয়ে গেছে বলে জানান বারাক। তিনি বলেন, ‘তুরস্কের চারটি এফ-৩৫ বিমান হ্যাঙ্গারে পড়ে আছে, কিন্তু সেগুলো ব্যবহার করা যাচ্ছে না।’

মার্কিন স্বল্পমেয়াদি রাজনৈতিক চক্রের সমালোচনা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি দুই বছর পর নির্বাচন হয়। অন্যদিকে চীন ও রাশিয়ার মতো বৈশ্বিক প্রতিদ্বন্দ্বীরা ৫০ বা ১০০ বছরের পরিকল্পনা নিয়ে চিন্তা করে। তিনি সতর্ক করে বলেন, ভূ-রাজনীতিতে এখন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং প্রযুক্তিগত সুবিধা অত্যন্ত জরুরি।

ন্যাটোর প্রতিরক্ষা উত্তেজনা নিয়ে তিনি বলেন, ইউরোপ আশা করে তুরস্ক মহাদেশটি রক্ষায় সহায়তা করবে। অথচ রাশিয়ার উদ্বেগের কারণে আঙ্কারার উন্নত অস্ত্র ব্যবস্থা অর্জনে বাধা দেয় তারা। এই পরিস্থিতিকে তিনি ‘পাগলামি’ বলে অভিহিত করেন।

হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প ও এরদোয়ানের বৈঠকের কথা স্মরণ করে তিনি জানান, সেখানে ছয়টি মূল বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। এস-৪০০ ব্যবস্থা সংক্রান্ত কিছু শর্তসহ এর অধিকাংশই সমাধান হয়েছে। আগামী ৪ থেকে ৬ মাসের মধ্যে বাকি সব সমস্যার সমাধান হবে বলে তিনি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

সিরিয়ায় আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে তুরস্কের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র নতুন সিরীয় প্রশাসনকে সমর্থন করে। তুরস্ক, সিরিয়া ও আজারবাইজানকে সংযোগকারী ভবিষ্যৎ জ্বালানি করিডোর বড় ধরনের কৌশলগত সুবিধা দেবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

এছাড়া তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) চুক্তির কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, এলএনজি এখন আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার সাম্প্রতিক শান্তি প্রচেষ্টার প্রসঙ্গ টেনে তিনি তুরস্ক ও আর্মেনিয়ার সীমান্ত পুনরায় খোলার বিষয়ে আশা প্রকাশ করেন।