আপনি পড়ছেন

দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা কাটাতে এবং ভারতের প্রভাব বলয়ের বাইরে একটি বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে তুলতে নতুন তৎপরতা শুরু করেছে পাকিস্তান। মূলত চীন ও বাংলাদেশকে সঙ্গে নিয়ে একটি ত্রিপক্ষীয় জোট গঠনের ইঙ্গিত দিয়েছে দেশটি। আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা বা সার্ক যখন প্রায় নিষ্ক্রিয়, ঠিক সেই মুহূর্তে ইসলামাবাদের এই উদ্যোগ কূটনৈতিক মহলে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

পাকিস্তানের পতাকা

পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার সম্প্রতি ‘ইসলামাবাদ কনক্লেভ’ ফোরামে এই পরিকল্পনার কথা প্রকাশ্যে এনেছেন। গত বুধবার আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে তিনি স্পষ্ট করেন যে, দক্ষিণ এশিয়ায় সহযোগিতার ক্ষেত্র বাড়াতে তার দেশ বদ্ধপরিকর। ইসহাক দার জোর দিয়ে বলেন, ‘আমরা এমন নীতিতে বিশ্বাসী নই যেখানে একজনের জয়ে অন্যজনের হার হয়। সংঘাতের পথ পরিহার করে আমরা সব সময় সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেছি।’

পাকিস্তান এমন একটি দক্ষিণ এশিয়া চায় যেখানে বিভাজনের পরিবর্তে পারস্পরিক সম্মান ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রাধান্য পাবে। তবে কোনো একটি দেশের ‘অনমনীয়’ মনোভাবের কারণে পুরো অঞ্চলের উন্নয়ন জিম্মি হয়ে থাকতে পারে না বলে মন্তব্য করেন পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি কোনো দেশের নাম উল্লেখ না করলেও তার ইঙ্গিত যে স্পষ্টত ভারতের দিকেই ছিল, তা সহজেই অনুমেয়।

এই নতুন উদ্যোগের ভিত্তি হিসেবে গত জুনে চীনের ইউনান প্রদেশের কুনমিং শহরে অনুষ্ঠিত একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের কথা উল্লেখ করা যায়। সেখানে বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তানের কূটনীতিকেরা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। যদিও তখন তারা দাবি করেছিলেন যে, তৃতীয় কোনো পক্ষকে লক্ষ্য করে এই আলোচনা হয়নি, তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে সেই বৈঠকের গুরুত্ব অনেক।

দক্ষিণ এশিয়ায় যখন নতুন মেরুকরণ চলছে, ঠিক তখনই পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এই প্রস্তাব এলো। বিশেষ করে ২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ঢাকা ও নয়াদিল্লির সম্পর্কের টানাপোড়েন দৃশ্যমান। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তার মৃত্যুদণ্ড দিলেও ভারত তাকে ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে আগ্রহী হয়ে উঠেছে পাকিস্তান।

অন্যদিকে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার দীর্ঘদিনের বৈরিতা আঞ্চলিক জোট সার্ককে কার্যত অকার্যকর করে রেখেছে। ২০১৬ সালে ইসলামাবাদে অনুষ্ঠেয় শীর্ষ সম্মেলনে ভারত যোগ না দেওয়ায় তা স্থগিত হয়ে যায়। ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরে হামলার জেরে নয়াদিল্লি ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এরপর থেকে সার্কের কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে। গত মে মাসেও দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে ড্রোন ও বিমান হামলা নিয়ে উত্তেজনা দেখা দেয়, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে।

অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও দক্ষিণ এশিয়ায় আন্তঃবাণিজ্য খুবই হতাশাজনক। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এ অঞ্চলের দেশগুলোর নিজেদের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ মাত্র ৫ শতাংশ, যা অর্থের অঙ্কে ২ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের মতো। অথচ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জোট আসিয়ানের ক্ষেত্রে এই হার ২৫ শতাংশ। বিশ্বব্যাংক মনে করে, বাণিজ্যিক বাধা দূর করা গেলে দক্ষিণ এশিয়ায় বছরে ৬ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের বাণিজ্য সম্ভব হতো।

বিশ্লেষকদের মতে, সার্কের এই শূন্যতা পূরণে পাকিস্তান এখন ছোট ছোট জোট বা ব্লকের দিকে ঝুঁকছে। লাহোর বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর সিকিউরিটি, স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড পলিসি রিসার্চের (সিএসএসপিআর) পরিচালক রাবিয়া আখতার আল-জাজিরাকে বলেন, ‘সার্কের স্থবিরতার সুযোগে পাকিস্তান আঞ্চলিক সহযোগিতায় বৈচিত্র্য আনতে চাইছে। তবে এই প্রস্তাবটি যতটা উচ্চাকাঙ্ক্ষী, বাস্তবে তা কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।’

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক প্রবীণ দন্ঠি মনে করেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের অবনতি এবং পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন চীনের জন্য একটি ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতার দরজা খুলে দিয়েছে। তার মতে, তাত্ত্বিকভাবে একটি নতুন আঞ্চলিক ব্লক তৈরির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তবে ভারতের সঙ্গে প্রতিযোগিতার ঝুঁকি নিয়ে ছোট দেশগুলো এই জোটে কতটা জড়াবে, তা দেখার বিষয়।

এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউটের (এএসপিআই) দক্ষিণ এশিয়া উদ্যোগের পরিচালক ফারওয়া আমের অবশ্য মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বহুপক্ষীয় বড় জোটের চেয়ে দ্বিপক্ষীয় বা ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগগুলোই বেশি দেখা যাবে। পাকিস্তানের এই কৌশলগত অবস্থান দেশটিকে আবারও আঞ্চলিক কূটনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসার আকাঙ্ক্ষা থেকেই উৎসারিত। তবে শেষ পর্যন্ত এই উদ্যোগ সফল হবে কি না, তা নির্ভর করবে আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতির আগামী দিনের গতিপ্রকৃতির ওপর।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.