লাখ ছুঁইছুঁই ডেঙ্গু রোগী, ম্যাজিস্ট্রেট সংকটে বন্ধ বিশেষ অভিযান

বিশেষজ্ঞদের কড়া সতর্কবার্তা ছিল আগে থেকেই। আক্রান্তের সংখ্যা লাখের ঘর ছোঁয়ার অপেক্ষায়, আর মৃত্যুও চারশর কাছাকাছি। এমন নাজুক পরিস্থিতিতেও রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন ডেঙ্গুবিরোধী বিশেষ অভিযান বন্ধ রেখেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দৃশ্যমান এসব কার্যক্রম বন্ধ থাকায় জনমনে সচেতনতা কমছে। তবে সংস্থা দুটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আপাতত প্রচার-প্রচারণাতেই সীমাবদ্ধ থাকছে তাদের কার্যক্রম।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ৫ ডিসেম্বর  একদিনেই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২০০ জন ডেঙ্গু রোগী। এ নিয়ে চলতি বছর মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৬ হাজার ৮২৭ জনে। এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৩৯৪ জন। যদিও দীর্ঘদিন পর শুক্রবার মৃত্যুহীন একটি দিন পার করেছে দেশ, যা কিছুটা স্বস্তির খবর। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই স্বস্তি একেবারেই সাময়িক।

ঢাকার দুই সিটির স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রশাসনিক জটিলতা ও জনবল সংকটের কারণে মশক নিধন কার্যক্রমে এক ধরনের স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ম্যাজিস্ট্রেট সংকটের অজুহাতে গত এক বছর ধরেই বন্ধ রয়েছে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত ভ্রাম্যমাণ আদালত। ফলে মাঠপর্যায়ে মশককর্মীদের কাজ সঠিকভাবে তদারকি করাও চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে কর্তৃপক্ষের জন্য।

চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে বরিশাল বিভাগ, যেখানে রোগী ২০ হাজার ৮৯৭ জন। এর পরেই অবস্থান ঢাকা বিভাগের, সেখানে আক্রান্ত ১৬ হাজার ৪৪৯ জন। ঢাকার দুই সিটির মধ্যে উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় ১৫ হাজার ৭৬৪ জন এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় ১৩ হাজার ৭৯৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন। তবে মৃত্যুর পরিসংখ্যানে এগিয়ে ঢাকা দক্ষিণ, সেখানে চলতি বছর ১৮১ জন মারা গেছেন। বিপরীতে উত্তরে এই সংখ্যা ৬৬।

অভিযান বন্ধ থাকা প্রসঙ্গে ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নিশাত পারভীন জানান, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের সতর্কতামূলক অভিযান চালাতে বলা হয়েছে। তবে ম্যাজিস্ট্রেট সংকটের কারণে আপাতত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা বা জরিমানা করা হচ্ছে না। অন্যদিকে ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রি. জে. ইমরুল কায়েস চৌধুরী জানান, তাদের এলাকায় রেকর্ডকৃত রোগীদের অধিকাংশই ঢাকার আশপাশের। ডেডিকেটেড হাসপাতাল থাকায় এখানে পরিসংখ্যান বেশি দেখায়। তবে তিনিও স্বীকার করেন, ম্যাজিস্ট্রেট স্বল্পতায় বিশেষ অভিযান চালানো সম্ভব হচ্ছে না, যদিও লার্ভা নির্মূল ও ওষুধ ছিটানোর কাজ চলছে।

বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার। তিনি বলেন, ‘বেশির ভাগ রোগী ঢাকার বাইরের, এ অজুহাতে সিটি করপোরেশনগুলো তাদের বিশেষ কার্যক্রম বন্ধ রাখবে, সে সুযোগ নেই। একদিকে ডেঙ্গুর পিক সিজন, অন্যদিকে করপোরেশনগুলো নির্বিকার, এটা সত্যিই দুঃখজনক।’ তিনি আরও উল্লেখ করেন, আগস্ট থেকেই পরিস্থিতির অবনতির বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছিল, কিন্তু সংশ্লিষ্টরা তা কানে তোলেননি।

নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত বা চিরুনি অভিযানের মতো কর্মসূচি মিডিয়ায় এলে মানুষ সচেতন হয়। একেবারে বন্ধ করে দিলে অসচেতনতা বাড়ে। এদিকে বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি ডিসেম্বর মাসজুড়েই ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি অব্যাহত থাকতে পারে। ডিসেম্বরের শেষ ভাগ কিংবা জানুয়ারি থেকে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতির আশা করা হচ্ছে।