গাজায় সেনা পাঠাতে প্রস্তুত তুরস্ক, এসডিএফ থেকে অ-সিরীয়দের অবিলম্বে সরানোর আহ্বান

কাতারের দোহা ফোরামে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান সিরিয়ার এসডিএফ বাহিনী থেকে অবিলম্বে অ-সিরীয় সদস্যদের বহিষ্কারের আহ্বান জানিয়েছেন। একইসঙ্গে তিনি ফিলিস্তিনে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনীতে (আইএসএফ) যোগ দিতে তুরস্কের প্রস্তুতির কথা জানান এবং ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের তীব্র নিন্দা করেন।

দোহায় অনুষ্ঠিত ২৩তম দোহা ফোরামে গত শনিবার ‘নিউজমেকার ইন্টারভিউ’ সেশনে দ্য গার্ডিয়ানের কূটনৈতিক সম্পাদক প্যাট্রিক উইন্টুরের প্রশ্নের জবাবে ফিদান এসব কথা বলেন।

এসডিএফ-কে সিরিয়ার সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রচেষ্টার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘আমরা জানি এসডিএফ পিকেকে-এর একটি অংশ এবং এর ভেতরে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যাদের একমাত্র লক্ষ্য তুরস্কের বিরুদ্ধে লড়াই করা। তাই শুরুতেই আমরা চাই, এসডিএফ থেকে ইরাক, ইরান ও তুরস্কের অ-সিরীয় সদস্যরা অবিলম্বে সরে যাক।’ তিনি উল্লেখ করেন, সিরিয়ার যেকোনো ঘটনা তুরস্কের ওপর প্রভাব ফেলে এবং তুরস্কের নিরাপত্তা ও স্বার্থবিরোধী সকল ইউনিট বিলুপ্ত করা উচিত।

সিরিয়ার মানবিক সংকট অসহনীয় হয়ে ওঠায় প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান সীমান্ত খুলে দেওয়ার নীতি গ্রহণ করেছিলেন বলে জানান ফিদান। তিনি বলেন, ইরান ও রাশিয়া সিরীয় সরকারকে জোরালো সমর্থন দিয়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্ব সিরীয় বিরোধীদের বদলে পিকেকে-কে সহায়তা করতে শুরু করায় তুরস্ক ও কাতার একাই পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে। তিনি সতর্ক করেন যে, এসডিএফ যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দেখানোর জন্য কেবল প্রতীকী আলোচনায় অংশ নেয়, তবে তা বিশ্বাসযোগ্য হবে না।

২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত গোয়েন্দা প্রধান থাকাকালীন পিকেকে নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে ফিদান বলেন, সেই সময় আব্দুল্লাহ ওচালান পিকেকে-কে চুক্তি থেকে সরাতে খুব একটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেননি। অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি বর্তমান পরিস্থিতিতে ওচালানের ভূমিকা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন।

ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ফিলিস্তিনে সেনা পাঠানোসহ সব ধরনের সহায়তা দিতে তুরস্ক প্রস্তুত। তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল যেভাবে প্রতিদিন যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে তা বর্ণনাতীত।’ এই সংকট নিরসনে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ কামনা করেন এবং আশা প্রকাশ করেন যে, ট্রাম্প ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা করবেন।

ফিদান উল্লেখ করেন, আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনীর প্রধান কাজ হওয়া উচিত সীমান্তে ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের পৃথক রাখা এবং সংঘাত বন্ধ করা। গাজার পুলিশ বাহিনী ও প্রশাসনকে পুনরায় সক্রিয় করার ওপর জোর দিয়ে তিনি সতর্ক করেন যে, প্রক্রিয়ার শুরুতেই নিরস্ত্রীকরণের চেষ্টা বাস্তবসম্মত হবে না। এছাড়া হাজার হাজার ফিলিস্তিনি বন্দি ইসরায়েলি কারাগারে নিয়মতান্ত্রিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কৃষ্ণ সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয়। বাণিজ্যিক রুটগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করা হলে যুদ্ধের পরিধি ভৌগোলিক ও কৌশলগতভাবে আরও বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। সবশেষে ফিদান কাতারকে বিশ্বব্যাপী সংঘাত নিরসনে একটি গুরুত্বপূর্ণ মধ্যস্থতাকারী দেশ হিসেবে অভিহিত করেন এবং তুরস্ক ও কাতারের মধ্যকার শক্তিশালী অংশীদারিত্বের প্রশংসা করেন।