মির্জা ফখরুল: ধর্মের নামে বিভাজন সৃষ্টির অপচেষ্টা চলছে

একটি বিশেষ মহল ধর্মের দোহাই দিয়ে দেশে বিভাজন সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশ ধর্মপ্রাণ মানুষের দেশ হলেও ধর্মের ভিত্তিতে রাষ্ট্র বা সমাজকে বিভক্ত করার রাজনীতিতে বিএনপি বিশ্বাসী নয়। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মতো দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।

রবিবার (৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক সাত দিনব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন। এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের নিয়ে সপ্তাহব্যাপী নানা কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

বক্তব্যের এক পর্যায়ে মির্জা ফখরুল দলীয় প্রধানের স্বাস্থ্যের প্রসঙ্গ টেনে আনেন। তিনি জানান, দেশের অভিভাবক ও গণতন্ত্রের আপসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি কখনও অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সার্বক্ষণিক তাঁর চিকিৎসার খোঁজখবর রাখছেন এবং দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা তাঁকে সেবা দিচ্ছেন। মহান আল্লাহর কাছে দেশবাসীর দোয়ায় তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন ফখরুল।

গত জুলাইয়ের পর দেশের মানুষের মানসিকতায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, জনগণ এখন রাষ্ট্র পরিচালনার ধরন থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে পরিবর্তন চায়। বিগত ১৫ বছরে ফ্যাসিস্ট সরকার দেশের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে। পুরোনো রাষ্ট্রকাঠামো, শিক্ষা বা বিচারব্যবস্থা এখন আর যুগোপযোগী নেই। তাই তারেক রহমানের নেতৃত্বে তরুণদের নিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

বেকারত্ব নিরসন ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, আগামী ১৮ মাসে এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির। কেবল চাকরি নয়, ব্যবসা, কৃষি ও শ্রমখাত মিলিয়ে এই কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে। বিএনপিকে একটি ‘অ্যাডভান্সড’ রাজনৈতিক দল হিসেবে অভিহিত করে তিনি বলেন, অতীতে দেশের সব ভালো অর্জন বিএনপির হাত ধরেই এসেছে। জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা এবং রেমিট্যান্সের পথ উন্মুক্ত করেছিলেন। আর খালেদা জিয়া নারী শিক্ষার প্রসার ঘটিয়েছেন।

অনুষ্ঠানে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের প্রতি কিছু কঠোর বার্তাও দেন মির্জা ফখরুল। তিনি অভিযোগ করেন, দলের ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব গ্রামের মানুষের কাছে ঠিকমতো পৌঁছানো হয়নি। তিনি বলেন, ‘আমি যখন গ্রামে যাই, তখন ৩১ দফার প্রচার চোখে পড়ে না।’ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রদলের কমিটির অভাব ও প্রচারণার ঘাটতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিগত দিনে ক্যাম্পাসে শক্ত অবস্থান না থাকায় নির্বাচনে কাঙ্ক্ষিত ফল আসেনি। তাই শিক্ষাঙ্গনে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে হবে এবং তথ্যপ্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জন করতে হবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, রাজনীতির প্রথম পাঠশালা হলো ছাত্রদল। পরিকল্পনামাফিক কাজ করলে সাফল্য আসবেই। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব এবং সঞ্চালনা করেন যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল। কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিকেলে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।