ইন্ডিগোর ফ্লাইট বিপর্যয়: ভারতের এভিয়েশন খাতে গভীর সংকটের অশনিসংকেত
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
জুলাই মাসেও ইন্ডিগোর অন-টাইম পারফর্মেন্স বা সময়ানুবর্তিতা ছিল ঈর্ষণীয়, প্রায় ৯১.৪ শতাংশ। অথচ গত শুক্রবার সেই হার নাটকীয়ভাবে মাত্র ৩.৭ শতাংশে নেমে এসেছে। ভারতের বেসরকারি বিমান পরিবহন খাতের ইতিহাসে এমন ধস এক নজিরবিহীন ঘটনা। দেশটির সবচেয়ে বড় এই এয়ারলাইন গত সপ্তাহে অন্তত ২ হাজার ফ্লাইট বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে, যার ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন হাজার হাজার যাত্রী।

সংস্থাটির এই বিপর্যয়ের মূল কারণ হিসেবে পাইলট সংকট এবং নতুন কর্মঘণ্টার নিয়ম বাস্তবায়নে পরিকল্পনার অভাবকে দায়ী করা হচ্ছে। ফ্লাইট বাতিলের ফলে যাত্রীদের ছুটির পরিকল্পনা থেকে শুরু করে বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার মতো জরুরি কাজগুলোও ব্যাহত হয়েছে। বিমানবন্দরগুলোর টার্মিনালে যাত্রীদের লাগেজ বা মালপত্রের স্তূপ জমতে দেখা গেছে, যা এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির জন্ম দিয়েছে।
পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, সংস্থাটিকে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। বাতিল হওয়া ফ্লাইটের টিকিটের টাকা ফেরত দিতে গিয়ে বা রিফান্ড হিসেবে ইতিমধ্যেই ৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার (৬৮ মিলিয়ন) খরচ হয়ে গেছে। অথচ গত অর্থবছরেও ইন্ডিগো ৯০০ কোটি (৯ বিলিয়ন) ডলার রাজস্ব আয় এবং ৮০ কোটি ৭০ লাখ (৮০৭ মিলিয়ন) ডলার মুনাফা করেছিল। কোম্পানির একজন নির্বাহী স্বীকার করেছেন যে, এটি তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ সময় এবং এই ঘটনা ব্র্যান্ডের ভাবমূর্তিতে গভীর আঘাত হেনেছে।
অনেকে ইন্ডিগোর এই বর্তমান অবস্থাকে ২০২২ সালের বড়দিনের সময় সাউথওয়েস্ট এয়ারলাইন্সের বিপর্যয়ের সঙ্গে তুলনা করছেন। সে সময় সাউথওয়েস্ট ১৬ হাজার ৯০০টি ফ্লাইট বাতিল করেছিল এবং ২০ লাখেরও বেশি যাত্রী আটকা পড়েছিলেন। এতে ওই কোম্পানির ক্ষতি হয়েছিল অন্তত ৪০ কোটি ডলার।
বর্তমানে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিমান বাজারের ৬৫ শতাংশই ইন্ডিগোর দখলে। অন্যদিকে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী এয়ার ইন্ডিয়া নিয়ন্ত্রণ করে ২৭ শতাংশ বাজার। অর্থাৎ, মাত্র দুটি কোম্পানি মিলে দেশটির ৯২ শতাংশ আকাশপথ নিয়ন্ত্রণ করছে, যা কার্যত ‘ডুয়োপলি’ বা দ্বৈত-প্রাধান্য তৈরি করেছে। ছোট শহরগুলোর রুটে ইন্ডিগোর একচেটিয়া আধিপত্য রয়েছে।
স্টারএয়ার কনসালটিংয়ের চেয়ারম্যান হর্ষ বর্ধন এ বিষয়ে সতর্ক করে বলেছেন, ‘ইন্ডিগোর আকার এমন বিশাল পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এর পরিচালনগত কোনো ব্যর্থতা পুরো ব্যবস্থার জন্যই ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।’ অন্যদিকে এয়ার ডেকানের প্রতিষ্ঠাতা জি.আর. গোপীনাথ লিখেছেন, কোনো দেশই দ্বৈত-প্রাধান্য বা কার্যকর একচেটিয়া পরিস্থিতিতে শক্তিশালীভাবে উন্নতি করতে পারে না।
ইন্ডিগোর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী এয়ার ইন্ডিয়াও খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থায় নেই। পুরনো বিমান বহর, সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন এবং সাম্প্রতিক বিমান দুর্ঘটনায় ২৬০ জনের মৃত্যুর পর তারা কঠোর তদন্তের মুখে রয়েছে। গত এক দশকে ভারতে কিংফিশার, জেট এয়ারওয়েজ এবং গো ফার্স্ট-এর মতো সংস্থাগুলো দেউলিয়া হয়ে গেছে। উচ্চ কর, প্রতিযোগিতা এবং সরবরাহ চেইনের সংকটের কারণে নতুন কোনো এয়ারলাইনও টিকতে পারছে না।
২০০৬ সালে রাকেশ গাঙ্গওয়াল ও রাহুল ভাটিয়ার হাত ধরে যাত্রা শুরু করা ইন্ডিগো বর্তমানে ৪০০টির বেশি এয়ারক্রাফট পরিচালনা করে। সাবেক কেএলএম প্রধান ও বর্তমান সিইও পিটার এলবার্সের নেতৃত্বে সংস্থাটি দৈনিক ২ হাজার ফ্লাইটে প্রায় ৩ লাখ ৮০ হাজার যাত্রী পরিবহন করে আসছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একসময় বলেছিলেন, ‘চটি-পায়ে থাকা মানুষেরও বিমানে থাকা উচিত।’ ইন্ডিগো সেই সাশ্রয়ী ভ্রমণের প্রতীক হয়ে উঠেছিল, যা এখন বড় চ্যালেঞ্জের মুখে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভারত সরকার দ্রুত হস্তক্ষেপ করেছে এবং পাইলটদের ফ্যাটিগ ম্যানেজমেন্ট বা ক্লান্তি ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিধি কিছুটা শিথিল করেছে। ইন্ডিগো কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে জানিয়েছে, কয়েক দিনের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। তবে রাজনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলছেন, ইন্ডিগো কি এতটাই বড় হয়ে গেছে যে তাদের পতন রোধ করা অসম্ভব?
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.