এনবিআর চেয়ারম্যান: বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই ঋণের ফাঁদে পড়েছে

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান বলেছেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই এক ধরনের ঋণের ফাঁদে প্রবেশ করেছে এবং এ বাস্তবতা স্বীকার করলেই কেবল অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার পথ খোলা হবে।

সোমবার (৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ স্টেট অব দ্য ইকোনমি ২০২৫ ও এসডিজি: প্রগ্রেস রিপোর্ট ২০২৫’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ মন্তব্য করেন।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, প্রবৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি বা অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে যত আলোচনা হোক, মূল সংকট একই, রাজস্ব আহরণ বাড়ানো না গেলে ঋণ নির্ভরতা কেবল বাড়তেই থাকবে।

তিনি বলেন, সব সূচকই একই কথা বলছে, আমরা দীর্ঘমেয়াদে ঋণের দিকে এগিয়ে গেছি। যত দ্রুত আমরা বিষয়টি মেনে নেব, তত দ্রুত এগোতে পারব।

কোম্পানি কর ও ভ্যাটসহ রাজস্ব সংগ্রহ ১৯৭২ সালে ১৬৮ কোটি টাকা থেকে বেড়ে গত অর্থবছরে ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছালেও অর্থনীতির আকারের তুলনায় তা এখনও খুব কম, বলেন এনবিআর প্রধান।

ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত কমে যাওয়াকে তিনি ‘অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ’ উল্লেখ করেন। কয়েক বছর আগে যেখানে এ হার ছিল ১০ শতাংশের বেশি, বর্তমানে তা ৭ শতাংশের কাছাকাছি।

আব্দুর রহমান খান বলেন, রাজস্ব বৃদ্ধির সীমাবদ্ধতা উন্নয়ন ব্যয় কমিয়ে দিয়েছে, আমদানি স্থবির, ব্যাংকিং খাতে সংকট বাড়ছে এবং কর ফাঁকি ও অদক্ষতা রাজস্ব আয় আরও কমিয়ে দিচ্ছে। ফলে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যয়ের জন্য ঋণের ওপরই বেশি নির্ভরশীল হচ্ছে।

তিনি বলেন, রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য ডিজিটালাইজেশন, অটোমেটেড অডিট, রিফান্ড প্রসেস, এবং নগদ ব্যবহার নিরুৎসাহিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আমরা সত্য অস্বীকার করে এগোতে পারব না। এখন একমাত্র পথ হলো, দেশীয় রাজস্ব শক্তিশালী করা এবং কর ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা।

অনুষ্ঠানে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানিত ফেলো প্রফেসর মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ দ্রুত এক ধরনের ‘বাধ্যতামূলক নির্ভরশীলতার’ দিকে যাচ্ছে; যার মূল কারণ রাজস্ব–জিডিপি অনুপাতের ধারাবাহিক পতন।

তিনি বলেন, এ বছর রাজস্ব–জিডিপি অনুপাত কমে ৭.৭ শতাংশে নেমেছে, যা গত বছর ছিল প্রায় ৮ শতাংশ এবং ২০১৫ সালে তা ছিল ১০.৯ শতাংশ।

মুস্তাফিজুর বলেন, রাজস্বব্যবস্থায় প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ আছে, কিন্তু আয়-ব্যয় ডেটার সমন্বয় বাড়াতে হবে।

তিনি সতর্ক করে বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজস্ব বাজেটে বেতন-ভাতার পর দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যয় ছিল কৃষি ও শিক্ষা, এখন তার জায়গায় সুদ পরিশোধ রয়েছে।

এই প্রবণতা বদলানো না গেলে বাংলাদেশ গুরুতর ঋণ-চাপে পড়তে পারে, যা দেশের জন্য ভালো হবে না, মন্তব্য করেন তিনি।