অতীতের মিত্র এখন মুখোমুখি: বিএনপি-জামায়াত দ্বন্দ্বে উত্তপ্ত রাজনীতির মাঠ
- Details
- by মো. জামাল উদ্দিন
দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মিত্রতা এখন অতীত, বরং আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। দল দুটির শীর্ষ নেতাদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে রাজনীতির মাঠ এখন বেশ সরগরম। একে অপরের বিরুদ্ধে ‘আওয়ামী লীগের ভাষায়’ কথা বলার অভিযোগ আনছে উভয় পক্ষই, যা সাধারণ মানুষের মধ্যেও কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে।

লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান রবিবার এক ভার্চুয়াল আলোচনায় কড়া ভাষায় প্রতিপক্ষের জবাব দিয়েছেন। তিনি ১৯৭১ সালের প্রসঙ্গ টেনে এনে জামায়াতের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় তারা একাত্তরে লাখো মানুষকে হত্যা করেছিল, ঠিক যেভাবে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরতে পতিত স্বৈরাচারও মানুষ হত্যা করেছে। তিনি অভিযোগ করেন, পলাতক স্বৈরাচার বিএনপির বিরুদ্ধে যে সুরে কথা বলত, ইদানীং কিছু ব্যক্তি বা দলও একই সুরে কথা বলার চেষ্টা করছে।
এর ঠিক আগের দিন শনিবার সিলেটে এক সমাবেশে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান পরোক্ষভাবে বিএনপির তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি মন্তব্য করেন, এক দল মানুষের ঘৃণা কুড়িয়েছে, আর অন্য দল এখন তাদের চেয়েও বড় শক্তি নিয়ে চাঁদাবাজি ও দখলে নেমেছে। তার মতে, দখলদার হতে গিয়ে জনগণ এক দলকে প্রত্যাখ্যান করেছে, আর অন্য দল এখন একই পথে হাঁটছে এবং নিজেদের মধ্যে মারামারি করে ধ্বংস হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় নেতাদের এই কথার লড়াইয়ের প্রভাব পড়েছে মাঠপর্যায়েও। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুই দলের কর্মী-সমর্থকরা নিজ দলের পক্ষে এবং প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক পোস্ট দিচ্ছেন। এই উত্তেজনা কেবল ভার্চুয়াল জগতেই সীমাবদ্ধ নেই; নরসিংদী, রাজশাহী, চাঁদপুর, ঝিনাইদহ, চট্টগ্রাম ও পাবনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দুই দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ভোটের মাঠে সুবিধা পেতেই দুই দল একে অপরের দুর্বল ও স্পর্শকাতর জায়গায় আঘাত করছে। বিশ্লেষক জোবাইদা নাসরীন মনে করেন, বিএনপি জামায়াতকে ঘায়েল করতে মুক্তিযুদ্ধ ইস্যুকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে, কারণ এটি জনগণের আবেগের জায়গা। অন্যদিকে, বিএনপিকে চাপে ফেলতে জামায়াত সামনে আনছে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতি, দখলদারিত্ব ও চাঁদাবাজির নানা অভিযোগ।
গত কিছুদিন ধরেই দুই দলের নেতাদের বক্তব্যে এই উত্তাপ টের পাওয়া যাচ্ছিল। গত ১১ই নভেম্বর ঠাকুরগাঁওয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জামায়াতের রাজনৈতিক সততা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। এর জবাবে ২০শে নভেম্বর খুলনায় জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার মন্তব্য করেন যে, বিএনপি এখন আওয়ামী লীগের ভাষায় কথা বলছে এবং ইসলামি কার্যক্রমে বাধা দিচ্ছে। এরপর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস গত বুধবার ঢাকার এক অনুষ্ঠানে অভিযোগ করেন, যারা একাত্তরে দেশের বিরুদ্ধে ছিল, তারা এখন ধর্ম ব্যবহার করে মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছে।
ঐতিহাসিকভাবে পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের শাসনামলেই জামায়াত রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার সুযোগ পায়। পরবর্তীতে দল দুটি জোটবদ্ধ হয়ে ২০০১ সালের নির্বাচনের পর সরকারও গঠন করে, যেখানে জামায়াতের দুই নেতা মন্ত্রীও হয়েছিলেন। তবে ২০০৮ সালের পর থেকে এই সম্পর্কে ফাটল ধরতে শুরু করে এবং ২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সেই দূরত্ব প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে রূপ নেয়।
সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাচন পদ্ধতি ও সংস্কার ইস্যুতে দুই দলের মতপার্থক্য দৃশ্যমান হয়েছে। বিশেষ করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে বিএনপির বৈঠকের পর নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণা নিয়ে জামায়াতের অসন্তোষ ছিল স্পষ্ট। এ ছাড়া আনুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি বা পিআর সিস্টেম নিয়েও দুই দলের অবস্থান ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত।
বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে দল দুটির নেতারা একে অপরকে দায়ী করছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ দাবি করেছেন, তারা কেবল ইতিহাস ও সত্য তথ্যের ভিত্তিতে কথা বলছেন। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জোবায়ের মনে করেন, বিএনপির পক্ষ থেকে আসা আক্রমণাত্মক বক্তব্য অপ্রত্যাশিত এবং রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত।
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে দৈনিক নয়া দিগন্তের সম্পাদক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক সালাহউদ্দিন মুহাম্মদ বাবর শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তার মতে, সাম্প্রতিক বক্তব্যগুলো শুনে মনে হচ্ছে দুই দলই একে অপরকে ঘায়েল করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘ইট মারলে পাটকেল খেতে হবে’—রাজনীতিতে এমন চর্চা চলতে থাকলে তা ভোটারদের নিরুৎসাহিত করবে এবং নির্বাচনের পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
বিবিসি বাংলা অবলম্বনে
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.