লাউ চাষে নতুন সম্ভাবনা: ৭০ দিনেই মিলবে ফলন, তীব্র গরমেও ফলবে

রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার বিজ্ঞানীদের সফল গবেষণায় উঠে এসেছে লাউয়ের এমন এক নতুন জাত, যা সারা বছরই চাষ করা সম্ভব। বিশেষ এই লাউ শুধু শীতকালেই নয়, গ্রীষ্মের তীব্র গরমেও ফলন দেবে। তাপ সহনশীল হওয়ায় এটি দেশের কৃষকদের জন্য নতুন আশার সঞ্চার করেছে।

‘বারি লাউ-৪’ নামের এই নতুন জাতটি উদ্ভাবন করেছেন রাইখালী পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা। এটি দেশের সব অঞ্চলেই চাষাবাদের উপযোগী, তবে পাহাড়ি মাটিতে এর ফলন সবচেয়ে ভালো হবে। এক হেক্টর জমিতে এই লাউ চাষ করলে ৮০ থেকে ৮৫ টন পর্যন্ত ফলন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুহাম্মদ জিয়াউর রহমান জাতটির বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছেন। তিনি জানান, প্রতিটি গাছে গড়ে ১০ থেকে ১২টি করে লাউ ধরবে। প্রতিটি ফলের ওজন আড়াই কেজির মতো হতে পারে। গাঢ় সবুজ রঙের ফলের গায়ে সাদাটে দাগ থাকা এই লাউ লম্বায় ৪২-৪৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়। এর জীবনকাল ১৩০ থেকে ১৫০ দিন।

কৃষি প্রযুক্তিতে অবদান রাখা এই প্রতিষ্ঠানটি ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন থেকেই পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রটি কৃষির উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের গবেষণায় এ পর্যন্ত ২১টি বিভিন্ন ফল ও সবজির উন্নত জাত উদ্ভাবিত হয়েছে, যা কৃষকদের ভাগ্য উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।

রাইখালী ইউনিয়নের কৃষক পাইদো অং মারমা গত অক্টোবর মাসের শেষ দিকে পরীক্ষামূলকভাবে এই লাউয়ের চাষ শুরু করেন। তিনি জানান, গবেষণা কেন্দ্র থেকে তাকে বিনামূল্যে সার ও বীজ দেওয়া হয়েছিল। এক বিঘা জমিতে লাগানো গাছগুলো বেশ বড় হয়েছে এবং শিগগিরই তিনি ফলন পাওয়ার আশা করছেন।

সাধারণত দেশে যেসব লাউ চাষ হয়, সেগুলোর ফলন পেতে সময় লাগে ৭০ থেকে ৯০ দিন। কিন্তু নতুন এই জাতে চারা রোপণের ৭০-৮০ দিনের মধ্যেই ফলন পাওয়া যাবে। এতে কৃষকদের উৎপাদন খরচ কমবে এবং লাভের পরিমাণ বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

গ্রীষ্মকালে আগাম ফসল হিসেবে ফাল্গুনের শেষ দিকে এটি চাষ করা যায়। এছাড়া চৈত্র মাসে বীজ বপন করে বৈশাখ মাসে চারা রোপণের সুযোগ রয়েছে। কৃষিবিদদের মতে, বারি লাউ-৪ চাষ করে কৃষকরা আর্থিকভাবে বেশ লাভবান হতে পারবেন।