তুরস্ক: ৮ ডিসেম্বর সিরীয় জনগণের জন্য এক নতুন অধ্যায়
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
সিরিয়ার জনগণের জন্য ৮ ডিসেম্বর একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা বলে মন্তব্য করেছেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান। তিনি জোর দিয়ে বলেন, দেশটির নিজস্ব সামাজিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সক্ষমতাসম্পন্ন একটি প্রশাসন ওই অঞ্চল ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে।

বুধবার তুরস্কের আঙ্কারায় ‘সিরিয়া আফটার ওয়ান ইয়ার: রিকভারি অ্যান্ড রিকনস্ট্রাকশন’ শীর্ষক এক সম্মেলনে উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ফাউন্ডেশন ফর পলিটিক্যাল, ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল রিসার্চ (সেটা) এই সম্মেলনের আয়োজন করে।
হাকান ফিদান উল্লেখ করেন, ৮ ডিসেম্বর সিরিয়ার জনগণের জন্য একটি নতুন দিন, নতুন আশা ও নতুন শুরুর বার্তা নিয়ে এসেছে। তবে এই তারিখ সব সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধান না দিলেও প্রবৃদ্ধি ও জীবনের নতুন গল্পের সূচনা হিসেবে কাজ করবে।
সশস্ত্র গোষ্ঠীকে এক পতাকায় আনার গুরুত্ব
সিরিয়ার রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলোর দিকে ইঙ্গিত করে তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জাতীয় ঐক্য ও বাহ্যিক সমর্থন নিশ্চিত করতে সব সশস্ত্র গোষ্ঠীকে একটি একক সেনাবাহিনীর অধীনে আনা অত্যন্ত জরুরি।
তিনি বলেন, ‘আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধে অংশ নেওয়া সব গোষ্ঠী নতুন প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সদ্য প্রতিষ্ঠিত জাতীয় সেনাবাহিনীর অধীনে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। এটি একটি অত্যন্ত ইতিবাচক শুরু।’
একাধিক সশস্ত্র গোষ্ঠী থাকলে অর্থনীতি, নিরাপত্তা ও প্রয়োজনীয় জনসেবা নিশ্চিত করা অসম্ভব উল্লেখ করে ফিদান বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে কেউ আপনার দেশে বিনিয়োগ করতে আসবে না; বরং মানুষ দেশ ছেড়ে পালাবে। তাই এই সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ঐক্যবদ্ধ হওয়া এবং সুশৃঙ্খল ও সমন্বিতভাবে কাজ করা গুরুত্বপূর্ণ।’
লাতাকিয়ার ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, নতুন ব্যবস্থার সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও আঞ্চলিক শক্তিগুলো কাজ শুরু করলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের তৎপরতা কমে আসবে বলে আশা করা হয়েছিল, তবে এখনো কিছু বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
সিরিয়াকে তার নাগরিকদের অধিকার রক্ষায় সব পক্ষের সঙ্গে সমান আচরণের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা একটি পরিপক্ব বোঝাপড়া লক্ষ্য করেছি, যা আমরা আশা করেছিলাম। তবে বাস্তবায়নে শুরুতে কিছু ছোটখাটো ত্রুটি দেখা গিয়েছিল, যা এখন সংশোধন করা হচ্ছে।’
ওয়াইপিজি ও দ্বৈত বাহিনীর প্রসঙ্গ
ওয়াইপিজি প্রসঙ্গে তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী কঠোর বার্তা দেন। তিনি বলেন, ‘দায়েশের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অজুহাতে ওয়াইপিজি বিশাল এলাকা ও জ্বালানি সম্পদ দখল করে রেখেছে। তারা নতুন প্রশাসনের সঙ্গে সমঝোতায় আসবে কি না, তা এখনো একটি অমীমাংসিত বিষয়।’
১০ মার্চের চুক্তির কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটি এখন পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়নি। দোহা ফোরামে সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদ হাসান আল-শাইবানি তাকে জানিয়েছেন, এ বিষয়ে খুব সামান্যই ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে।
ফিদান বলেন, ‘তুরস্ক সব সময় জোর দিয়ে বলে আসছে যে এই প্রক্রিয়াটি এগিয়ে নেওয়া আবশ্যক এবং শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যার সমাধান করতে হবে। নতুন কোনো সংঘাত কারও জন্যই সুফল বয়ে আনবে না। তাই সংলাপের মাধ্যমে প্রক্রিয়াটি এগিয়ে নেওয়া জরুরি। ওয়াইপিজিকে বুঝতে হবে যে কোনো দেশে দুটি সশস্ত্র বাহিনী থাকতে পারে না। তাদের হাতে থাকা সশস্ত্র ইউনিটগুলোকে অবশ্যই সিরিয়া প্রশাসনের অধীনে আসতে হবে।’
তিনি আরও স্পষ্ট করেন, ঐক্যবদ্ধ সিরিয়া মানে এই নয় যে কোনো একটি গোষ্ঠী, সম্প্রদায় বা জাতিসত্তা অন্যদের ওপর আধিপত্য বিস্তার করবে। তিনি বলেন, ‘এটি হলে তা হবে ভিন্ন মডেলে পুরোনো সরকার ব্যবস্থারই একটি সংস্করণ। আমরা সেটিরও বিরোধিতা করি।’
ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা
ইসরায়েলের সম্প্রসারণবাদ এবং গাজা যুদ্ধকে ব্যবহার করে নেতানিয়াহুর অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টার সমালোচনা করেন ফিদান। তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলের উচিত নয় অন্যদের নিরাপত্তাহীনতায় ফেলে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। অন্যদের স্থিতিশীল, নিরাপদ ও সমৃদ্ধ রেখেই সহযোগিতার পরিবেশ তৈরি করতে হবে।’
তিনি জোর দিয়ে বলেন, অগ্রগতির জন্য ইসরায়েলকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের বিরোধিতা থেকে সরে আসতে হবে এবং সম্মত হওয়া শান্তি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে।
তুরস্ক, সিরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছে জানিয়ে ফিদান উল্লেখ করেন, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন সিরিয়ার নতুন প্রশাসনকে সুযোগ দিতে ইচ্ছুক, যা ইতিবাচক। তিনি আশা প্রকাশ করেন, যুক্তরাষ্ট্র ও সিরিয়ার প্রস্তাবগুলোর বিরোধিতা করবে না ইসরায়েল।
হাকান ফিদান আরও বলেন, সিরিয়াকে আবারও বিশৃঙ্খলার অঞ্চলে পরিণত হতে দেবে না তুরস্ক। গত ২৫-৩০ বছরে ইরাক ও সিরিয়ার ঘটনাপ্রবাহ থেকে তুরস্ক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা নিয়েছে এবং ভবিষ্যতে সিরিয়া বিষয়ে আরও নিয়মতান্ত্রিক নীতি নিয়ে এগিয়ে যাবে।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.