পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের চূড়ান্ত শুনানি নির্বাচনের পর

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে দায়ের করা আপিলের চূড়ান্ত শুনানি আগামী জাতীয় নির্বাচনের পর পর্যন্ত মুলতবি করেছে আপিল বিভাগ। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ ৫ মার্চ পর্যন্ত শুনানি স্থগিতের আদেশ দেন।

বহুল আলোচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলসহ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে আনা বেশ কয়েকটি বিষয়কে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছিল, তার বিরুদ্ধে আপিলকারীরা সংশোধনীটি পুরোপুরি বাতিলের আবেদন করেছেন।

আদালতে রিটকারীদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া। ইন্টারভেনর হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার সারা হোসেন, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির ও ব্যারিস্টার এস এম শাহরিয়ার কবির। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।

শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্যে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনীর কিছু কিছু বিষয় থাকা দরকার; কিছু কিছু বিষয় পরবর্তী জাতীয় সংসদের হাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত।

তখন প্রধান বিচারপতি জানতে চান, জামায়াতের আইনজীবীদের বক্তব্য, শুনানি শেষ না করে মুলতবি রেখে পরবর্তী সংসদের ওপর সিদ্ধান্ত ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের অবস্থান কী।

জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আমরা চাই শুনানি শেষ হোক, এবং আপিল বিভাগ এ বিষয়ে একটি রায় দিক।

এ সময় প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ মন্তব্য করে বলেন, আমরা আগের আপিল বিভাগের মতো কোনো রায় দিতে চাই না; যেগুলো নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। কয়েকদিন পরে নতুন আপিল বিভাগ গঠিত হবে। সেখানে শুনানি হলে কেমন হয়? অথবা দীর্ঘ মুলতবি দিলে তো সব পক্ষই সুবিধা পায়।

পরে আবার শুনানি শুরু হলে অ্যাটর্নি জেনারেল জানান, তারা আজই শুনানি শেষ করতে চান।

২০১১ সালের ৩০ জুন সংসদে পাস হওয়া পঞ্চদশ সংশোধনীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলসহ সংবিধানে ৫৪টি ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা হয়।

গত বছরের জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলে সংশোধনীটির বৈধতা নিয়ে দুটি পৃথক রিট করা হয়। একটি রিট করেন সুজন সম্পাদকসহ পাঁচ নাগরিক, আরেকটি করেন নওগাঁর বাসিন্দা মোফাজ্জল হোসেন।

চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট রায় দেয়। রায়ে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্তিসংক্রান্ত ২০ ও ২১ ধারা অসাংবিধানিক ও বাতিল ঘোষণা করা হয়, সংবিধানে যুক্ত ৭ক, ৭খ ও ৪৪(২) অনুচ্ছেদ বাতিল করা হয়, গণভোট-সংক্রান্ত ১৪২ অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল করা হয়।

তবে পুরো পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করা হয়নি; অন্য ধারাগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব পরবর্তী সংসদের হাতে রেখে দেওয়া হয়।

আদালত জানিয়েছে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন শেষে নতুন আপিল বিভাগের অধীনে ৫ মার্চ থেকে চূড়ান্ত শুনানি শুরু হবে।