অস্ট্রিয়ায় স্কুলে মুসলিম ছাত্রীদের হিজাব পরা নিষিদ্ধ, আইন পাস

অস্ট্রিয়ার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ স্কুলে ১৪ বছরের কম বয়সী মুসলিম ছাত্রীদের হিজাব পরা নিষিদ্ধ করে একটি বিতর্কিত আইন পাস করেছে। বৃহস্পতিবার ক্ষমতাসীন জোটের আনা এই বিলটি পাসের ফলে দেশটিতে নতুন করে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। তবে আইন বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, পাঁচ বছর আগে একই ধরনের একটি নিষেধাজ্ঞা আদালত অসাংবিধানিক ঘোষণা করায় এবারের আইনটিও একই পরিণতির মুখে পড়তে পারে।

ক্ষমতাসীন তিন মধ্যপন্থী দলের জোট বিলটি উত্থাপন করে এবং অতি-ডানপন্থী ফ্রিডম পার্টিও এতে সমর্থন জানায়। তবে ফ্রিডম পার্টি স্কুলশিক্ষকদের ক্ষেত্রেও এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য করার দাবি তুলেছিল। পার্লামেন্টের সবচেয়ে ছোট দল গ্রিনস একমাত্র দল হিসেবে এই বিলের বিরোধিতা করে এটিকে সংবিধানের লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছে। আইনটি সরকারি ও বেসরকারি সব ধরনের স্কুলে কার্যকর হবে এবং এটি লঙ্ঘন করলে ১৫০ থেকে ৮০০ ইউরো পর্যন্ত জরিমানা আরোপ করা হবে। সরকারের তথ্য অনুযায়ী, এই আইনের ফলে প্রায় ১২ হাজার ছাত্রী প্রভাবিত হবে।

শিক্ষামন্ত্রী ক্রিস্টোফ ভাইডারকেয়ার জানান, পরিবার ও অন্য ছেলেদের পক্ষ থেকে মেয়েরা ‘ধর্মীয় কারণে’ পোশাক পরার বিষয়ে চাপের মুখে পড়ছে। জোটের শরিক দল নিওসের সংসদীয় নেতা ইয়ানিক শেটি বলেন, ‘এটি কোনো ধর্মের বিরুদ্ধে নয়, বরং ১৪ বছরের নিচের মেয়েদের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য। হিজাব শুধু পোশাক নয়, এটি মেয়েদের পুরুষের দৃষ্টি থেকে আড়াল করতে ব্যবহৃত হয় এবং তাদের ওপর যৌনতার প্রতীক আরোপ করে।’

সমন্বয় মন্ত্রী ক্লডিয়া প্লাকোলম হিজাবকে ‘নাবালিকা মেয়েদের ওপর দমনের প্রতীক’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি জানান, সরকার একটি গবেষণা চালাচ্ছে যা ভবিষ্যতে সাংবিধানিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়ক হবে।

অন্যদিকে, এই আইনের তীব্র বিরোধিতা করেছে গ্রিনস পার্টি। দলটির উপনেত্রী সিগ্রিড মাউরার বলেন, ‘এটি সাংবিধানিকভাবে অগ্রাহ্য এবং মুসলিমদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ।’ মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞা মুসলিমদের বিরুদ্ধে আগে থেকে বিদ্যমান বৈষম্যমূলক পরিবেশকে আরও উসকে দেবে। অস্ট্রিয়ার মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি সংস্থা আইজিজিও এটিকে মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন বলে আখ্যা দিয়ে বলেছে, ‘এতে শিশুরা ‘কলঙ্কিত ও প্রান্তিক’ হয়ে পড়বে।’

এর আগে ২০২০ সালে অস্ট্রিয়ার সাংবিধানিক আদালত ১০ বছরের কম বয়সী ছাত্রীদের হিজাব নিষিদ্ধ করার একটি আইনকে অবৈধ ঘোষণা করেছিল। আদালত সে সময় জানায়, আইনটি মুসলিমদের প্রতি বৈষম্যমূলক এবং রাষ্ট্রের ধর্মীয় নিরপেক্ষতার নীতির পরিপন্থী।