বিএনপির চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় আসছে রদবদল!

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি যে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে, তাতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের আভাস পাওয়া গেছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, রাজনৈতিক কৌশল এবং শরিক দলগুলোর সঙ্গে আসন সমঝোতার অংশ হিসেবে বেশ কিছু আসনে নতুন করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন।

দলটি এর আগে দুই ধাপে মোট ২৭২টি আসনে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছিল। এর মধ্যে প্রথম দফায় ২৩৭টি এবং পরবর্তীতে ৩৬টি আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে ঘোষিত এই তালিকার অন্তত ১৩ থেকে ১৭টি আসনে প্রার্থীর নাম পরিবর্তন হতে পারে। মূলত যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত শরিকদের সঙ্গে আসন বণ্টন চূড়ান্ত করতেই এই সংশোধনীর পথে হাঁটছে বিএনপি।

শরিকদের জন্য সর্বোচ্চ ২৫টি আসন ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের। তবে দলীয় প্রতীকের বাইরে খুব একটা ঝুঁকি নিতে নারাজ দলটির হাইকমান্ড। আসন ভাগাভাগি নিয়ে বিশেষ জটিলতা তৈরি হয়েছে ঢাকা-১২ আসনকে কেন্দ্র করে। এখানে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী সাইফুল আলম নীরব। অন্যদিকে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা সাইফুল হক ঢাকা-৮ আসনে নির্বাচন করতে চাইলেও সেখানে মির্জা আব্বাস থাকায় তিনি এখন ঢাকা-১২ আসনে আগ্রহী।

সাইফুল আলম নীরব ও সাইফুল হকের প্রার্থিতা নিয়ে দলের ভেতরেই ভিন্নমত রয়েছে। স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানান, চার শতাধিক মামলার আসামি এবং কারাভোগ করা নেতা হিসেবে নীরবকে বাদ দেওয়া কঠিন। আবার অন্য একটি পক্ষের মতে, তেজগাঁও-কারওয়ান বাজার এলাকায় চাঁদাবাজির অভিযোগে অতীতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল নীরবের বিরুদ্ধে। তাই দুঃসময়ে রাজপথে সক্রিয় থাকা সাইফুল হকের বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে। যদি শরিক নেতাদের আসন নিশ্চিত করা না যায়, তবে তাদের সম্ভাব্য মন্ত্রিসভায় রাখার প্রতিশ্রুতির বিষয়টিও আলোচনায় উঠে এসেছে।

আসন বণ্টন নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে এবং শরিকদের মান ভাঙাতে শনিবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বৈঠকে বসবে বিএনপি। গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, গণফোরাম ও গণঅধিকার পরিষদসহ সমমনা দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৃহস্পতিবার রাতে এই বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও অনিবার্য কারণে তা পিছিয়ে শনিবার নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানান সাইফুল হক।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আসন বণ্টন নিয়ে অসন্তোষ দেখা দিলে গণতন্ত্র মঞ্চে ভাঙন ধরার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া জামায়াতে ইসলামী ছোট দলগুলোকে নিয়ে একটি নির্বাচনী সমঝোতা গড়ার চেষ্টা চালাচ্ছে এবং ইতোমধ্যে পুরোনো জোটের একটি দলের সঙ্গে তাদের আলোচনা শুরু হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে ১২ দলীয় জোটের নেতা সৈয়দ এহসানুল হুদা ও নেজামে ইসলাম পার্টির নির্বাহী সভাপতি একেএম আশরাফুল হক জাতীয় স্বার্থে ঐক্যের ওপর জোর দিয়েছেন।

সার্বিক পরিস্থিতি ও চূড়ান্ত তালিকা প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার রাতে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, তারা খুব দ্রুতই চূড়ান্ত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করবেন। নির্বাচনকে অত্যন্ত কঠিন চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করে স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে সাবধানতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’