কানাডার ৬ এমপিকে পশ্চিম তীরে ঢুকতে দিলো না ইসরায়েল

নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে কানাডার একদল আইনপ্রণেতাকে অধিকৃত পশ্চিম তীরে প্রবেশ করতে দেয়নি ইসরায়েল। জর্ডান সীমান্ত দিয়ে ওই এলাকায় যাওয়ার চেষ্টার সময় তাদের আটকে দেওয়া হয়। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের দাবি, সফর আয়োজনকারী সংস্থার সঙ্গে ‘সন্ত্রাসী’ সংগঠনের সংযোগ থাকার কারণেই এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার সীমান্তে এই ঘটনা ঘটে। প্রতিনিধিদলটিতে ছয়জন সংসদ সদস্যের (এমপি) পাশাপাশি আরও ২৪ জন সদস্য ছিলেন। সফরের মূল আয়োজক ছিল ‘দ্য কানাডিয়ান-মুসলিম ভোট’ (টিসিএমভি) নামের একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। তাদের উদ্দেশ্য ছিল পশ্চিম তীরের বর্তমান পরিস্থিতি সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করা এবং সেখানকার সাধারণ মানুষ ও আন্তর্জাতিক অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় করা।

সীমান্তে এমপিদের বাধা দেওয়ার ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে অটোয়া। কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনিতা আনন্দ এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সীমান্তে কানাডীয় নাগরিকদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, সে বিষয়ে দেশটির সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে আপত্তি জানিয়েছে বলে জানান তিনি। প্রতিনিধিদলে থাকা নিউ ডেমোক্র্যাটিক পার্টির এমপি জেনি কোয়ান এই ঘটনাকে ‘সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত ইদ্দো মোয়েদ জানিয়েছেন, সফরটির আয়োজক টিসিএমভির সঙ্গে ‘ইসলামিক রিলিফ ওয়ার্ল্ডওয়াইড’র সম্পর্ক রয়েছে। ইসরায়েল এই সংস্থাটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে এবং নিষিদ্ধ করেছে। মূলত এই সংযোগের অভিযোগ তুলেই তাদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এছাড়া সীমান্ত নিয়ন্ত্রণকারী ইসরায়েলি সংস্থা কোগাট সংবাদমাধ্যম সিবিসি নিউজকে জানিয়েছে, প্রতিনিধিদলটি আগে থেকে কোনো সমন্বয় না করেই সীমান্তে হাজির হয়েছিল, যা নিরাপত্তাবিধির লঙ্ঘন।

অবশ্য ইসরায়েলের তোলা এসব অভিযোগ সরাসরি নাকচ করে দিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। টিসিএমভি স্পষ্ট জানিয়েছে, তাদের তহবিলের জোগান আসে কেবল অনুমোদিত দাতাদের কাছ থেকেই। অন্যদিকে ইসলামিক রিলিফ কানাডার প্রধান নির্বাহী তুফাইল হুসেইন অভিযোগগুলোকে ভিত্তিহীন ও বিপজ্জনক বলে অভিহিত করেছেন। তিনি কানাডীয় গণমাধ্যমকে জানান, তাদের দাতব্য কার্যক্রম সন্ত্রাসবাদে মদত দেয়—এমন দাবি ত্রাণকর্মী ও উপকারভোগীদের জীবন ঝুঁকির মুখে ফেলে।

সাম্প্রতিক সময়ে কানাডা ও ইসরায়েলের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে কিছুটা শীতলতা বিরাজ করছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের সঙ্গে কানাডাও আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পর এই টানাপোড়েন দৃশ্যমান হয়। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু তখন ওই সিদ্ধান্তকে ‘লজ্জাজনক’ বলে মন্তব্য করেছিলেন। এর আগেও চলতি বছর যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির কয়েকজন এমপিকে একই কায়দাতে জর্ডান সীমান্তে বাধা দিয়েছিল ইসরায়েল।

যে ছয়জন এমপি বাধার মুখে পড়েছেন, তাদের মধ্যে জেনি কোয়ান ছাড়া বাকি পাঁচজনই কানাডার ক্ষমতাসীন লিবারেল পার্টির সদস্য। তারা হলেন—ইকরা খালিদ, গুরবক্স সাইনি, ফারেস আল সৌদ, সামির জুবেরি ও আসলাম রানা। অথচ ২০২৪ সালেও টিসিএমভির আয়োজনে আরেকটি সংসদীয় দল ইসরায়েল ও পশ্চিম তীর সফর করার অনুমতি পেয়েছিল।

এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ন্যাশনাল কাউন্সিল অব কানাডিয়ান মুসলিমস (এনসিসিএম)। সংগঠনটির দাবি, এমপিদের সঙ্গে তাদের কর্মী ও কমিউনিটি নেতারাও ওই দলে ছিলেন। এনসিসিএমের প্রধান নির্বাহী স্টিফেন ব্রাউন মনে করেন, অধিকৃত ভূখণ্ডের বাস্তবতা যারা স্বাধীনভাবে দেখতে চান, তাদের প্রবেশ সীমিত করার ধারাবাহিক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই ইসরায়েল এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।