আপনি পড়ছেন

লেবাননের উপ-প্রধানমন্ত্রী তারেক মিত্রি অভিযোগ করেছেন যে, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির শর্ত পালনে ব্যর্থতা ঢাকতে লেবাননের সঙ্গে অর্থনৈতিক সমঝোতার আলোচনার প্রস্তাব দিচ্ছে। তিনি স্পষ্ট করেছেন, বৈরুত কেবল ইসরায়েলি হামলা বন্ধ, দখলকৃত এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার এবং বন্দীদের মুক্তির বিষয়েই আলোচনায় আগ্রহী।

লেবানন ও ইসরায়েলের পতাকা

যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণকারী ‘মেকানিজম কমিটি’র অধীনে শুক্রবার বৈরুত ও তেল আবিবের মধ্যে আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগেই তারেক মিত্রি এই মন্তব্য করেন। জানা গেছে, ইসরায়েল নিরাপত্তার বিষয়টি ছাপিয়ে অর্থনৈতিক ইস্যুগুলোকে আলোচনার এজেন্ডায় যুক্ত করতে চাইছে। তবে লেবানন জোর দিয়ে বলছে, আলোচনা শুধুমাত্র ইসরায়েলি হামলা বন্ধ, অধিকৃত লেবাননি ভূখণ্ড থেকে সেনা প্রত্যাহার এবং প্রায় ২০ জন লেবাননি বন্দীর মুক্তির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত।

২০২৪ সালের নভেম্বরে সই হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় এই মেকানিজম কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এই কমিটিতে লেবানন, ফ্রান্স, ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র এবং লেবাননে নিয়োজিত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীর (ইউনিফিল) সামরিক প্রতিনিধিরা রয়েছেন।

আনাদোলু এজেন্সিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মিত্রি জানান, এই বৈঠক থেকে লেবানন মূলত দুটি ফলাফল আশা করছে। প্রথমত, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় করা যে লেবাননের সেনাবাহিনী লিতানি নদীর দক্ষিণে তাদের দায়িত্ব পূর্ণাঙ্গভাবে পালন করছে। দ্বিতীয়ত, যুদ্ধবিরতি মেনে চলার জন্য ইসরায়েলের ওপর রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক চাপ বৃদ্ধি করা।

তিনি বলেন, যুদ্ধবিরতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলে তা ইসরায়েলের জন্য দখলকৃত পাহাড়গুলো থেকে সরে যাওয়া এবং বন্দীদের হস্তান্তরের পথ প্রশস্ত করবে। মিত্রি উল্লেখ করেন, ইসরায়েলের প্রস্তাব অনুযায়ী কমিটিকে অর্থনৈতিক চুক্তির কাঠামোতে রূপান্তর করা মূলত মূল সমস্যা থেকে নজর সরানোর কৌশল। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি পক্ষেরই তাদের অবস্থান তুলে ধরার অধিকার রয়েছে।’ তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, লেবাননের অগ্রাধিকার হলো যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন।

এদিকে মেকানিজম কমিটিতে লেবাননের প্রতিনিধি দলের প্রধান হিসেবে সাবেক রাষ্ট্রদূত সাইমন করমকে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। তবে হিজবুল্লাহ এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে একে ‘অপরিণত’ বলে অভিহিত করেছে। তাদের দাবি, বেসামরিক কোনো অংশগ্রহণ হতে হবে শত্রুতা অবসানের শর্তসাপেক্ষে।

চলতি মাসের শুরুতে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছিল, ২০২৫ সালের শেষের মধ্যে লেবানন সরকার ও সেনাবাহিনী হিজবুল্লাহর অস্ত্র নিষ্ক্রিয় করতে ব্যর্থ হলে ইসরায়েলি বাহিনী হিজবুল্লাহ-সংশ্লিষ্ট স্থানগুলোতে বড় ধরনের হামলার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। এ বিষয়ে মিত্রি বলেন, এ ধরনের হুমকি এখনো ‘অনুমাননির্ভর’। তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘যুদ্ধ বলতে কী বোঝানো হচ্ছে? এটি কি চলমান হত্যাকাণ্ড ও বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা, নাকি পূর্ণমাত্রার সামরিক অভিযান?’

মিত্রি জানান, ইসরায়েল ও লেবাননের মধ্যে আনুষ্ঠানিক কোনো যোগাযোগ চ্যানেল নেই। তবে বিদেশি দূতরা হিজবুল্লাহর সক্ষমতা পুনর্গঠন নিয়ে ইসরায়েলের উদ্বেগের কথা লেবাননকে জানিয়েছেন এবং রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব বিস্তার ও অস্ত্র সমস্যা সমাধানে বৈরুতকে প্রচেষ্টা জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছেন।

লেবানন সরকার গত আগস্টে হিজবুল্লাহর অস্ত্রসহ সব অস্ত্র রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে আনার পরিকল্পনা অনুমোদন করে। সেপ্টেম্বরে সেনাবাহিনী এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পাঁচ ধাপের একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করে, যদিও এর কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়নি। পরিকল্পনার প্রথম ধাপে চলতি বছরের শেষের মধ্যে লিতানি নদীর দক্ষিণ থেকে হিজবুল্লাহর অস্ত্র সরানোর কথা বলা হয়েছে। তবে হিজবুল্লাহ বারবার নিরস্ত্রীকরণের বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করে দাবি করেছে, ইসরায়েলকে আগে লেবাননের সব ভূখণ্ড থেকে সরে যেতে হবে।

গাজায় যুদ্ধের জেরে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা আন্তঃসীমান্ত হামলার পর ইসরায়েল ও লেবানন যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছায়। এই সংঘাতে ৪,০০০ এরও বেশি মানুষ নিহত এবং ১৭,০০০ মানুষ আহত হয়েছেন। যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী জানুয়ারিতে দক্ষিণ লেবানন থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর সরে যাওয়ার কথা থাকলেও তারা কেবল আংশিকভাবে সরেছে এবং পাঁচটি সীমান্ত চৌকিতে সামরিক উপস্থিতি বজায় রেখেছে।

সিরিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে মিত্রি জানান, গত বছরের শেষের দিকে আসাদ সরকারের পতনের পর নতুন কূটনৈতিক সম্পর্কের অংশ হিসেবে লেবানন প্রতিবেশী সিরিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা বাড়াতে চাইছে। নভেম্বরে মিত্রি দামেস্কে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা এবং জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সমস্যা নিরসনে আলোচনা করেছেন।

সবচেয়ে জরুরি সমস্যা হিসেবে তিনি লেবাননের কারাগারে থাকা সিরীয় বন্দীদের বিষয়টি উল্লেখ করেন। মিত্রি বলেন, প্রায় দুই হাজার সিরীয় বন্দী ও আটকদের হস্তান্তরের বিষয়ে একটি বিচার বিভাগীয় সহযোগিতা চুক্তি প্রস্তুত করা হচ্ছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, অদূর ভবিষ্যতে এর সমাধান হবে এবং বন্দীদের সমস্যা সমাধানে বৈরুতের রাজনৈতিক সদিচ্ছা রয়েছে। সীমান্ত নিরাপত্তা এবং স্থল সীমান্ত নির্ধারণের বিষয়টিও আলোচনার অগ্রাধিকারে রয়েছে বলে তিনি জানান।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.