ধানমন্ডিতে রাজনৈতিক কর্মীর রহস্যজনক মৃত্যু

রাজধানীর একটি নারী হোস্টেল থেকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) এক নেত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত জান্নাতারা রুমী দলটির ধানমন্ডি থানা কমিটির যুগ্ম সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। পুলিশ প্রাথমিকভাবে ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে মনে করলেও তার সহযোদ্ধারা একে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে দাবি করছেন।

জিগাতলা এলাকার ওই হোস্টেলের পাঁচতলার একটি কক্ষে একাই থাকতেন ৩০ বছর বয়সী জান্নাতারা। স্থানীয় হাজারীবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাফিজুর রহমান জানান, সকালে গৃহকর্মী অনেক ডাকাডাকি করেও জান্নাতারার কোনো সাড়া পাননি। পরে দরজায় ধাক্কা দিলে হার্ডবোর্ডের দরজার ছিটকিনি খুলে যায়। এ সময় সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় তাকে ঝুলতে দেখা যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে।

জান্নাতারার কক্ষ তল্লাশি করে টেবিলের ওপর বিষণ্নতা নিরাময়ের বেশ কিছু ওষুধ পাওয়া গেছে। ওসি হাফিজুর রহমান উল্লেখ করেন, তদন্তে জানা গেছে ব্যক্তিগত জীবনে তিনি দুইবার বিবাহবিচ্ছেদের শিকার হয়েছিলেন। পারিবারিক কলহ ও মানসিক অবসাদ থেকেই তিনি এমন চরম পথ বেছে নিয়েছেন বলে পুলিশ ধারণা করছে।

তবে পুলিশের এই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন এনসিপি নেতারা। দলটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব তারেক রেজা নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে অভিযোগ করেন, এটি কোনো সাধারণ আত্মহত্যা নয়, বরং খুন। তিনি জানান, গত মাসে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর এলাকায় একটি ঘটনার পর থেকে জান্নাতারাকে অনলাইনে ক্রমাগত হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। তারেক রেজার দাবি, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তাকে সাইবার বুলিং, ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি দেওয়া হতো।

দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে জান্নাতারাকে দেখতে যান এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘অনলাইনে হুমকির সুনির্দিষ্ট প্রমাণ থাকার পরও কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। রুমিকে হিট লিস্টে রাখা হয়েছিল।’ এই মৃত্যুর দায়ভার তিনি রাষ্ট্রের ওপর চাপিয়ে দেন।

নিহতের চাচাতো ভাই মেহেদী হাসান মৃত্যুর খবর পেয়ে মর্গে ছুটে আসেন। তিনি জানান, সাভারের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র মেডিকেল কলেজ থেকে নার্সিং পাস করার পর জান্নাতারা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। নওগাঁ জেলার নজিপুর পৌরসভার পত্নীতলা এলাকায় তাদের গ্রামের বাড়ি। বাবার পেশা কৃষি এবং তিন ভাই-বোনের মধ্যে জান্নাতারা ছিলেন দ্বিতীয়।

পারিবারিক সূত্র জানায়, জান্নাতারার চার বছর বয়সী একটি ছেলে ও দুই বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। সন্তানরা তাদের বাবার কাছেই থাকে। মেহেদী হাসান বলেন, দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর থেকেই জান্নাতারা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন এবং তীব্র বিষণ্নতায় ভুগছিলেন। তার ধারণা, এই বিষণ্নতা থেকেই তার বোন আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন।

ধানমন্ডি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কামরুজ্জামান জান্নাতারার লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করেন। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মৃতদেহের গলায় দাগ থাকলেও কপাল, মাথা বা গালের কোথাও আঘাতের চিহ্ন নেই। আইনি প্রক্রিয়া শেষে সন্ধ্যায় স্বজনেরা তার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যান।