নেপালের রাজনীতিতে ওলির প্রত্যাবর্তন

নেপালের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি আবারও তার রাজনৈতিক দল কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল-ইউনিফায়েড মার্ক্সিস্ট লেনিনিস্টের (সিপিএন-ইউএমএল) সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। রাজধানী কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত দলের দুই দিনব্যাপী সাধারণ সম্মেলনে তিনি বিপুল ভোটে জয়ী হন। বিক্ষোভের মুখে ক্ষমতা ছাড়ার মাত্র কয়েক মাসের মাথায় তার এই প্রত্যাবর্তনকে নেপালের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

দলীয় সূত্র জানায়, ৭৩ বছর বয়সি এই প্রবীণ নেতা তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঈশ্বর পোখরেলকে বড় ব্যবধানে পরাজিত করেছেন। ওলি পেয়েছেন ১ হাজার ৬৬৩ ভোট, যেখানে পোখরেলের প্রাপ্ত ভোট ৫৬৪টি। দলের প্রচার বিভাগের প্রধান রাজেন্দ্র গৌতম হিন্দুস্তানটাইমসকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

দলীয় সম্মেলনস্থলে ‘কে পি বা (বাবা), আমরা তোমাকে ভালোবাসি’ লেখা পূর্ণাবয়ব কাটআউট ও ব্যানার দেখা যায়। পশ্চিম নেপালের গণ্ডকী প্রদেশ থেকে সম্মেলনে অংশ নিতে আসা তারা মায়া থাপা মাগার বলেন, ‘ওলি আবারও দলীয় প্রধান হওয়ায় আমি খুব খুশি। তাকে এখন জাতির জন্য প্রয়োজন।’

তিনি আরও বলেন, ‘নেপালে যা ঘটেছে, তার পেছনে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ রয়েছে। কেবলমাত্র ওলির নেতৃত্বেই আমরা এই ধাক্কা কাটিয়ে উঠে দেশকে সমৃদ্ধ করতে পারি।’

গত সেপ্টেম্বরে তরুণ প্রজন্মের ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন চারবারের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি। সে সময় বিক্ষোভকারীরা তার বাসভবন, সংসদ ও আদালতসহ শতাধিক ভবনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। পদত্যাগপত্রে ওলি উল্লেখ করেছিলেন, তিনি আশা করেন তার এই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সহায়ক হবে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর সরকারের দেওয়া একটি সংক্ষিপ্ত নিষেধাজ্ঞাকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে ওই সংঘাত ছড়িয়ে পড়েছিল, যাতে অন্তত ৭৭ জনের মৃত্যু হয়। বছরের পর বছর ধরে চলা অর্থনৈতিক স্থবিরতা এবং ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগের কারণে সৃষ্ট জনরোষ এই আন্দোলনের পেছনে মূল কারণ ছিল বলে মনে করা হয়।

ওলির পদত্যাগের পর অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পান সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি। আগামী মার্চে দেশটিতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে এবং সে পর্যন্ত একটি তত্ত্বাবধায়ক প্রশাসন দেশ পরিচালনা করবে। সেই নির্বাচনের জন্য সিপিএন-ইউএমএলের প্রস্তুতি এখন ওলির নেতৃত্বেই চলবে। তবে দেশটির প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি জনগণের আস্থার ঘাটতি থাকায় একটি অবাধ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজন বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে। অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী কার্কি অবশ্য নির্বাচনের জন্য ‘ন্যায্য ও ভয়মুক্ত পরিবেশ’ নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।