প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে হামলা: ৩১ জন শনাক্ত, গ্রেপ্তার ৯

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ অভিযান চালিয়ে দুটি জাতীয় দৈনিক ও দুটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে অন্তত ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সোমবার সকালে প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে একজনকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা থেকে আটক করা হয়, যার নাম মো. নাইম। ঢাকার তেজগাঁওয়ের কুনিপাড়া এলাকার এই বাসিন্দা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন যে, তিনি হামলার সময় মোট ১ লাখ ২৩ হাজার টাকা লুট করেছিলেন। লুণ্ঠিত সেই টাকা দিয়ে তিনি মোহাম্মদপুর থেকে একটি টিভি ও একটি ফ্রিজ কেনেন। অভিযানকালে এসব পণ্য এবং লুট করা নগদ ৫০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।

গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে ভাঙচুর এবং পরে অগ্নিসংযোগ করা হয়। একই রাতে ধানমন্ডিতে অবস্থিত ছায়ানট সংস্কৃতি ভবনেও হামলার ঘটনা ঘটে। এর পরদিন শুক্রবার রাতে তোপখানা রোডে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়। উদীচীর একাংশের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে অভিযোগ করেছিলেন, পরিকল্পিতভাবেই এই অগ্নিকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রবিবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে অবগত করেছে যে, ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে এখন পর্যন্ত ৩১ জনকে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এর পাশাপাশি চট্টগ্রামে ভারতের সহকারী হাইকমিশনারের বাসভবনের কাছে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টার ঘটনায়ও ভিডিও ফুটেজ দেখে তিনজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

আটককৃতদের মধ্যে মো. সোহেল রানা ও মো. শফিকুল ইসলামকে কারওয়ান বাজার রেললাইন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। সোহেল রানার বিরুদ্ধে মাদকসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১৩টি মামলা রয়েছে। অন্যদিকে, শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অতীতে ককটেল বিস্ফোরণ ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে দুটি মামলা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।

শেরপুর জেলার বাসিন্দা রাকিব হোসেনকে ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে শনাক্ত করা হয়েছে। তিনি প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টারে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন। এমনকি ধ্বংসযজ্ঞের ছবি নিজের আইডি থেকে ফেসবুকে পোস্ট করার পাশাপাশি উসকানিমূলক বক্তব্যও প্রচার করেছিলেন তিনি।

বিজ্ঞপ্তিতে গ্রেপ্তারকৃত আরও কয়েকজনের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। তারা হলেন মো. সাইদুর রহমান, মো. কাশেম ফারুক ও ফয়সাল আহমেদ প্রান্ত। এদের মধ্যে সাইদুর রহমান ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার নোয়াকান্দা গ্রামের বাসিন্দা। আর মো. কাশেম ফারুক বগুড়ার আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া কাসেমুল উলুম মাদ্রাসার প্রাক্তন ছাত্র, যিনি বর্তমানে ঢাকার মোহাম্মদপুরে বসবাস করেন।

পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও গোয়েন্দা পুলিশ আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। বর্তমানে তাদের পরিচয় যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। এর আগে সোমবার সকালের দিকে দেওয়া অপর এক বিজ্ঞপ্তিতে ৬ জনকে গ্রেপ্তারের কথা বলা হলেও পরবর্তীতে অভিযানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে গ্রেপ্তারকৃতদের সংখ্যা বেড়ে ৯ জনে দাঁড়ায়।