আপাতত শিকাগোতে ট্রাম্পের সেনা মোতায়েন আটকালো সুপ্রিম কোর্ট

যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) শিকাগো অঞ্চলে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের অনুমতি দিতে অস্বীকার করেছে। ডেমোক্র্যাট-শাসিত বিভিন্ন অঞ্চলে অভ্যন্তরীণ কাজে সামরিক বাহিনীর ব্যবহার বাড়াতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্যোগের অংশ হিসেবে এই মোতায়েনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। সমালোচকরা বলছেন, এটি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে শাস্তি দেওয়া এবং ভিন্নমত দমনের প্রচেষ্টা।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের কর্মকর্তা ও স্থানীয় নেতাদের করা মামলায় এক বিচারকের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা আপাতত বহাল রেখেছেন বিচারপতিরা। ওই আদেশে শত শত ন্যাশনাল গার্ড সদস্য মোতায়েন বন্ধ করা হয়। মামলাটি চলাকালে মোতায়েন কার্যকর করার অনুমতি চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ।

আদালতের সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতে স্বাক্ষরবিহীন আদেশে বলা হয়, প্রাথমিক পর্যায়ে সরকার এমন কোনো আইনি কর্তৃত্ব চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয়েছে, যা ইলিনয়ে আইন প্রয়োগের জন্য সামরিক বাহিনী ব্যবহারের অনুমতি দেয়। ন্যাশনাল গার্ডকে ফেডারেল নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা সম্ভবত কেবল ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতেই প্রযোজ্য।

আদালতের তিন বিচারপতি স্যামুয়েল আলিটো, ক্লারেন্স থমাস ও নিল গরসাচ এই আদেশের বিরোধিতা করেছেন। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র অ্যাবিগেইল জ্যাকসন এক বিবৃতিতে বলেন, ট্রাম্প অভিবাসন আইন প্রয়োগ এবং সহিংস দাঙ্গাকারীদের হাত থেকে ফেডারেল কর্মীদের সুরক্ষায় অক্লান্ত পরিশ্রমের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং আজকের রায় সেই মূল এজেন্ডা ক্ষুণ্ন করে না।

ইলিনয়ের গভর্নর জেবি প্রিটজকার এই রায়কে ট্রাম্প প্রশাসনের ধারাবাহিক ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে এবং কর্তৃত্ববাদের অগ্রযাত্রা মন্থর করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেন।

উচ্চ আদালতে এটি ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য একটি বিরল ধাক্কা। আদালতে বর্তমানে ৬–৩ ব্যবধানে রক্ষণশীল সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে এবং ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে প্রত্যাবর্তনের পর প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা নিয়ে তার বিস্তৃত দাবির পক্ষে আদালত প্রায়ই অবস্থান নিয়েছে।

ন্যাশনাল গার্ড অঙ্গরাজ্যভিত্তিক মিলিশিয়া বাহিনী, যারা সাধারণত গভর্নরের অধীনে থাকে। তবে প্রেসিডেন্ট চাইলে তাদের ফেডারেল দায়িত্বে ডাকতে পারেন। এর আগে ট্রাম্প শিকাগো ও ওরেগনের পোর্টল্যান্ডে সেনা পাঠানোর নির্দেশ দেন। তার আগে লস অ্যাঞ্জেলেস, মেমফিস ও ওয়াশিংটন ডিসিতেও ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা হয়েছিল। প্রশাসনের দাবি, অভিবাসন দমনে বিক্ষোভে ফেডারেল সম্পত্তি রক্ষায় সেনা প্রয়োজন।

ট্রাম্প এমন একটি আইনের ওপর নির্ভর করেছেন, যা বিদ্রোহ দমন, আগ্রাসন প্রতিহত বা নিয়মিত বাহিনী দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রয়োগে অক্ষম হলে প্রেসিডেন্টকে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের ক্ষমতা দেয়।

স্থানীয় কর্মকর্তারা বিক্ষোভকে শান্তিপূর্ণ ও নিয়ন্ত্রণযোগ্য বলে বর্ণনা করায় ফেডারেল বিচারকেরা প্রশাসনের দাবিতে সন্দেহ প্রকাশ করেন। জেলা বিচারক পেরি অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বলেন, বিদ্রোহ বা আইন অকার্যকরের প্রমাণ নেই। সেনা মোতায়েন আগুনে ঘি ঢালবে।