আপনি পড়ছেন

তীব্র সংঘর্ষে বিধ্বস্ত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্ক অঞ্চলের সিভারস্ক শহর থেকে সেনা প্রত্যাহার করেছে দেশটির বাহিনী। তুমুল লড়াইয়ের পর রুশ বাহিনী শহরটি দখলে নিয়েছে।

রুশ ড্রোন হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ইউক্রেনের রাজধানীর একটি ভবন। ছবি- রয়টার্স

মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) টেলিগ্রামে দেওয়া এক বিবৃতিতে ইউক্রেনের জেনারেল স্টাফ জানায়, জনবল ও সামরিক সরঞ্জামে রুশ বাহিনীর উল্লেখযোগ্য সুবিধা ছিল। প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেও ছোট ছোট ইউনিটে আক্রমণ চালিয়ে রুশ সেনারা প্রতিরক্ষায় থাকা ইউক্রেনীয় বাহিনীর ওপর ধারাবাহিক চাপ সৃষ্টি করে। আমাদের সেনাদের জীবন রক্ষা এবং ইউনিটগুলোর যুদ্ধক্ষমতা বজায় রাখার জন্যই সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনা প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়ার আগে রুশ বাহিনীর বড় ধরনের ক্ষতি করা হয়েছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেন। দেশটির সামরিক পর্যবেক্ষণ সাইট ডিপস্টেট জানায়, মঙ্গলবার রাতে রুশ বাহিনী সিভারস্কের পাশাপাশি রাশিয়া সীমান্তসংলগ্ন ইউক্রেনের সুমি অঞ্চলের গ্রাবোভস্কে নামের একটি গ্রামও দখল করেছে।

এর আগে ১১ ডিসেম্বর রুশ লেফটেন্যান্ট জেনারেল সের্গেই মেদভেদেভ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে জানিয়েছিলেন, তীব্র লড়াই চলা সিভারস্ক দখল করা হয়েছে। তবে সে সময় ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা রাশিয়ার সেই দাবি অস্বীকার করেছিলেন। তখন ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী জানায়, প্রতিকূল আবহাওয়ার সুযোগ নিয়ে রুশ সেনারা হামলা চালাচ্ছে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা পথেই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।

কিয়েভ ইন্ডিপেনডেন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিভারস্ক উত্তর দোনেৎস্কের প্রতিরক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যুদ্ধের আগে ১০ হাজার মানুষের বাসস্থান হলেও বর্তমানে সেখানে মাত্র কয়েকশ’ বেসামরিক মানুষ রয়ে গেছেন।এই শহরটি বৃহত্তর স্লোভিয়ানস্ক ও ক্রামাতোরস্ক এলাকাকে আড়াল করে রেখেছিল। সেগুলোকে ইউক্রেনের তথাকথিত দুর্গ বেল্টের প্রধান ঘাঁটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে রাশিয়া এসব এলাকা দখল করতে পারেনি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

দোনেৎস্ক রাশিয়ার ভূখণ্ডগত দাবির কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা তিনটি ইউক্রেনীয় অঞ্চলের একটি। এসব দাবি যুদ্ধবিরতি চুক্তির পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইউক্রেনীয় নেতারা স্পষ্ট জানিয়েছেন, মস্কোর আগ্রাসনে দখল হওয়া দেশের কোনো ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়া হবে না।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রায় আক্রমণ শুরু করে রাশিয়া। বর্তমানে ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশ এলাকা মস্কোর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, ডিসেম্বরের শুরু পর্যন্ত রুশ বাহিনী ইউক্রেনের আনুমানিক ১৯ শতাংশ ভূখণ্ড দখল করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ২০১৪ সালে সংযুক্ত করা ক্রিমিয়া, সম্পূর্ণ লুহানস্ক অঞ্চল এবং দোনেৎস্ক অঞ্চলের ৮০ শতাংশেরও বেশি জায়গা। এ ছাড়া খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়া অঞ্চলের প্রায় ৭৫ শতাংশ এবং খারকিভ, সুমি, মাইকোলাইভ ও দিনিপ্রোপেত্রোভস্ক অঞ্চলের ছোট অংশও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে রুশ বাহিনী।

গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের প্রস্তাবিত ২৮ দফা শান্তি পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা হলে ক্রিমিয়া, লুহানস্ক ও দোনেৎস্ককে বাস্তবিক অর্থে রুশ অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। যুক্তরাষ্ট্রও তা মেনে নেবে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সম্প্রতি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র দোনেৎস্ক অঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয় বাহিনী প্রত্যাহারের জন্য চাপ দিচ্ছে, যাতে সেখানে একটি মুক্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা যায়। এটাকে ‘নিরস্ত্রীকৃত অঞ্চল’ বলে উল্লেখ করছে রাশিয়া।

জেলেনস্কি জানান, গত সোমবার রাতে রুশ বাহিনী ইউক্রেনে আরেকটি বড় হামলা চালিয়েছে। ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ১৩টি অঞ্চলে অন্তত তিনজন নিহত হন। তাদের মধ্যে চার বছর বয়সী এক কন্যাশিশুও রয়েছে।

অন্যদিকে, রাশিয়ার বেলগোরোদ অঞ্চলে গত দুই দিনে ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলায় চারজন নিহত হয়েছেন বলে স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এদিকে পোপ লিও মঙ্গলবার হতাশা প্রকাশ করে বলেন, রাশিয়া ২৫ ডিসেম্বর (বড়দিন) যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

ইতালির কাস্তেল গানদোলফোতে নিজের বাসভবনের বাইরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে পোপ বলেন, ‘আমি শান্তিপ্রিয় মানুষদের কাছে আরেকবার আহ্বান জানাচ্ছি, অন্তত বড়দিনকে শান্তির দিন হিসেবে সম্মান করা হোক।’ তিনি আরো বলেন, ‘হয়তো তারা আমাদের কথা শুনবে। আর অন্তত ২৪ ঘণ্টার জন্য হলেও সারা বিশ্বে একটি শান্তির দিন আসবে।’

ইউক্রেন ও রাশিয়ার অধিকাংশ মানুষ খ্রিস্টান হলেও তাদের অনেকেই অর্থোডক্স সম্প্রদায়ের, যারা বড়দিন উদযাপন করেন ৭ জানুয়ারি। চলতি বছরের ইস্টারের আগে হঠাৎ ৩০ ঘণ্টার একতরফা যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছিলেন পুতিন। এটি ছিল এক বিরল বিরতি।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.