আপনি পড়ছেন

পেন্টাগন চীনের সামরিক অগ্রগতি বিষয়ক তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে স্বীকার করেছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ড এখন সরাসরি হুমকির মুখে রয়েছে। প্রতিবেদনে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শক্তির মাধ্যমে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়ে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র চীনকে শ্বাসরোধ বা অপমান করতে চায় না, বরং এমন সক্ষমতা অর্জন করতে চায় যেন কেউ তাদের বা তাদের মিত্রদের ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে না পারে।

চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা

গত ২৩ ডিসেম্বর ‘মিলিটারি অ্যান্ড সিকিউরিটি ডেভেলপমেন্টস ইনভলভিং দ্য পিপলস রিপাবলিক অব চায়না ২০২৫’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। এতে পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্রুত অগ্রগতির বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনের মূল তথ্যে দেখা যায়, চীনের ঐতিহাসিক সামরিক সম্প্রসারণ এখন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে। এর মধ্যে রয়েছে পারমাণবিক শক্তি, নৌ অভিযান, প্রচলিত নির্ভুল হামলা, সাইবার অনুপ্রবেশ এবং মহাকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।

২০২৪ সাল জুড়ে চীনের কার্যকর পারমাণবিক ওয়ারহেডের সংখ্যা ৬০০-এর নিচে ছিল। যদিও এই বৃদ্ধির হার আগের অনুমানের চেয়ে ধীর, তবুও ২০৩০ সালের মধ্যে তা ১,০০০ ছাড়িয়ে যাওয়ার পথে রয়েছে। পিএলএ সম্ভবত ১০০টিরও বেশি সলিড-প্রোপেলান্ট আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সাইলোতে মোতায়েন করেছে, যা তাদের দ্রুত উৎক্ষেপণের সক্ষমতা বাড়িয়েছে। এছাড়া আগাম সতর্কবার্তা ব্যবস্থা, হাইপারসনিক অস্ত্র এবং স্বল্প ক্ষমতার পারমাণবিক বিকল্পগুলোর ক্ষেত্রেও অগ্রগতি অব্যাহত রয়েছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অবকাঠামোতে সাইবার হামলা ১৫০ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে ‘ভল্ট টাইফুন’ নামে একটি চীনা রাষ্ট্র-পৃষ্ঠপোষক হ্যাকিং গ্রুপের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এই গ্রুপটি যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি, যোগাযোগ, পানি এবং পরিবহন খাতে অনুপ্রবেশ করেছে। তাইওয়ান সংঘাতের মতো কোনো সংকটে তারা বড় ধরনের ব্যাঘাত ঘটাতে সক্ষম হতে পারে। এছাড়া পিএলএ তাদের স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক উন্নত করছে, যা গোয়েন্দা নজরদারি এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনীকে লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়। এর পাশাপাশি অ্যান্টি-স্যাটেলাইট মিসাইল এবং নির্দেশিত-শক্তি অস্ত্রের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের কক্ষপথের কার্যক্রম ব্যাহত করার লক্ষ্যও তাদের রয়েছে।

জাহাজের সংখ্যার দিক থেকে পিপলস লিবারেশন আর্মি নেভি এখন বিশ্বের বৃহত্তম নৌবাহিনী হিসেবে নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছে। ফুজিয়ান ক্যারিয়ারের সমুদ্র পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে এবং প্রথমবারের মতো ডুয়েল-ক্যারিয়ার মহড়া অর্জন করা হয়েছে। পরিকল্পনায় ভবিষ্যতে মোট নয়টি ক্যারিয়ার রাখার ইঙ্গিত রয়েছে, যার মধ্যে ছয়টি ২০৩৫ সালের মধ্যে সচল হবে। এই উন্নয়নগুলো ২০৪৯ সালের মধ্যে একটি বিশ্বমানের সেনাবাহিনী গড়ে তোলার চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের স্বপ্নকে সমর্থন করে। এর অন্তর্বর্তীকালীন লক্ষ্য হিসেবে ২০২৭ সালের মধ্যে তাইওয়ান-সম্পর্কিত পরিস্থিতি মোকাবিলা এবং ২০৩৫ সালের মধ্যে ব্যাপক আধুনিকায়নের কথা বলা হয়েছে।

পেন্টাগনের ২০২৫ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের ঐতিহাসিক সামরিক মহড়া যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডকে ক্রমবর্ধমানভাবে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। প্রতিবেদনের ভূমিকায় যুক্তরাষ্ট্রের ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, ‘আমরা চীনকে শ্বাসরোধ, শাসন বা অপমান করতে চাই না। বরং আমরা কেবল ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের কোনো দেশ যাতে আমাদের বা আমাদের মিত্রদের ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে না পারে, সেই ক্ষমতা নস্যাৎ করতে চাই।’

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ সংঘাতের পরিবর্তে শক্তির মাধ্যমে অঞ্চলে প্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করার ওপর অগ্রাধিকার দেবে। একইসঙ্গে চীনের সঙ্গে স্থিতিশীল শান্তি, ন্যায্য বাণিজ্য এবং সম্মানজনক সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করবে।

এদিকে বেইজিং এই প্রতিবেদনের ফলাফল তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ভণ্ডামির অভিযোগ এনেছে। তারা উল্লেখ করে, বিশ্বের বৃহত্তম পারমাণবিক অস্ত্রাগার যুক্তরাষ্ট্রের হাতে রয়েছে এবং নিরস্ত্রীকরণের দায়িত্ব পালনে তাদেরই মজুত হ্রাসে নেতৃত্ব দেওয়া উচিত। বেইজিং পেন্টাগনের এই মূল্যায়নকে অতিরঞ্জিত দাবি হিসেবে অভিহিত করেছে এবং বলেছে, এর উদ্দেশ্য হলো চীনকে কলঙ্কিত করা এবং যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ সামরিক বাজেটের ন্যায্যতা প্রমাণ করা।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.