দীর্ঘ প্রায় ১৭ বছরের নির্বাসন শেষে আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ২০০৮ সালে দেশত্যাগের পর এই প্রথম তিনি স্বদেশের মাটিতে পা রাখতে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ সময় বেলা ১১টা ৫৫ মিনিট থেকে ১২টার মধ্যে তাকে বহনকারী বিমানটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করার কথা রয়েছে। প্রিয় নেতাকে একনজর দেখার অপেক্ষায় রাজধানীর ৩০০ ফিট এলাকা এবং বিমানবন্দর সংলগ্ন চত্বর লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠেছে, যা রূপ নিয়েছে এক বিশাল জনসমুদ্রে।

তারেক রহমান

তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে বুধবার দিবাগত রাত থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা নেতাকর্মীরা খোলা আকাশের নিচে অবস্থান নিয়েছেন। রাজধানীর পূর্বাচলের ৩০০ ফিট এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, নেতাকর্মীরা রাস্তায় পাটি, পলিথিন বিছিয়ে এবং পাতলা কম্বল জড়িয়ে শুয়ে আছেন। কেউ কেউ সড়ক বিভাজকে গাছের ফাঁকে জায়গা করে নিয়েছেন, আবার শীত নিবারণে কোথাও কোথাও আগুন জ্বালিয়ে উষ্ণতা নেওয়ার চেষ্টা চলছে। নেতাকর্মীদের মতে, নেতার ফেরার এই রাতটি তাদের কাছে ‘চাঁদরাতের’ মতো আনন্দের। শুধু ৩০০ ফিট এলাকা নয়, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজধানীর গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতেও স্লোগান দিতে দেখা গেছে নেতাকর্মীদের। তাদের মুখে ‘তারেক রহমান আসছে, রাজপথ কাঁপছে’, ‘লিডার আসছেন’—এমন স্লোগান ধ্বনিত হচ্ছে।

কেরানীগঞ্জ থেকে ১৭টি বাসে করে আসা শাহজাহান মিয়া জানান, নেতাকে একনজর না দেখে এবং তার ভাষণ না শুনে তিনি বাড়ি ফিরবেন না। নওগাঁ থেকে আসা নাসিরুদ্দিন আশা প্রকাশ করেন, তারেক রহমান দেশে ফিরে শান্তি ও সুদিন ফিরিয়ে আনবেন। সিলেট, রংপুর ও কুড়িগ্রাম থেকে আসা কর্মীরাও পথের ক্লান্তি ভুলে নেতার আগমনের অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন। জামালপুরের সরিষাবাড়ি থেকে আসা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘ সময় ধরে আমরা নির্যাতন সহ্য করেছি। গ্রাম থেকে অনেক মানুষ শুধু আমাদের লিডারের দেশে ফেরাকে উদযাপন করতে এসেছে। আমরা সারারাত এখানেই থাকব।’

তারেক রহমানকে সংবর্ধনা জানাতে ৩০০ ফিট এলাকায় ৪৮ ফুট বাই ৩৬ ফুট আয়তনের বিশাল মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব ও অভ্যর্থনা কমিটির সদস্যসচিব রুহুল কবির রিজভী জানিয়েছেন, এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় ৫০ লাখ নেতাকর্মীর সমাগম হবে বলে তারা প্রত্যাশা করছেন। বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে তারেক রহমান সরাসরি এই সমাবেশে যোগ দেবেন এবং সেখানে একমাত্র বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখবেন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের এই প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও এর আশপাশের এলাকায় নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সমন্বয়ে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। পুলিশ, র‍্যাব, এপিবিএন, আনসার, সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী এবং সাদা পোশাকের গোয়েন্দারা সার্বক্ষণিক নজরদারি করছেন। পুরো এলাকায় ড্রোন ওড়ানোর ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এস এম রাগিব সামাদ জানিয়েছেন, তারেক রহমানের অবতরণ থেকে বিমানবন্দর ত্যাগ করা পর্যন্ত সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারকি করতে বুধবার রাতেই পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বাহারুল আলম ৩০০ ফিটের সংবর্ধনা মঞ্চ এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

শৃঙ্খলা রক্ষার্থে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, তারেক রহমানকে অভ্যর্থনাকারীরা কোনো ব্যাগ বা লাঠি বহন করতে পারবেন না। এছাড়া মোটরসাইকেল নিয়ে গুলশান-বনানী থেকে বিমানবন্দর সড়কে চলাচল বা তারেক রহমানের গাড়িবহরে যুক্ত হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ৩০০ ফিট এলাকার সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে তারেক রহমান রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তার মা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দেখতে যাবেন। এরপর তিনি গুলশানের বাসভবনে ফিরবেন। পরদিন শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) তিনি তার বাবা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত করবেন এবং সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। একই দিনে তিনি সম্প্রতি নিহত শরীফ ওসমান হাদীর কবর জিয়ারত করবেন।

এদিকে, তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে স্বাগত জানিয়েছে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ)। বুধবার এক বিবৃতিতে সংগঠনের প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম আশা প্রকাশ করেন, তারেক রহমানের উপস্থিতিতে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও পুঁজিবাজারে নতুন গতি সঞ্চার হবে এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসবে।

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.