আপনি পড়ছেন

ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের নীতি গ্রহণ করায় গ্রিসের তীব্র সমালোচনা করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, পশ্চিম জেরুজালেমে অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক ত্রিপক্ষীয় শীর্ষ সম্মেলনে গ্রিসের অংশগ্রহণ আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের ঝুঁকি তৈরি করেছে এবং ইতিহাসের কাঠগড়ায় গ্রিক প্রধানমন্ত্রীকে কঠোরভাবে বিচার করা হবে।

কিরিয়াকোস মিতসোটাকিস ও বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু

সোমবার পশ্চিম জেরুজালেমে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, গ্রিক প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিতসোটাকিস এবং গ্রিক সাইপ্রাস প্রশাসনের নেতা নিকোস ক্রিস্টোডৌলিডেসের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়া নেতানিয়াহু এই বৈঠকের মাধ্যমে গ্রিসের সঙ্গে সম্পর্ক আরও নিবিড় করার চেষ্টা করেছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন, নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মিতসোটাকিস ইতিহাসের পাতায় নেতিবাচকভাবে চিহ্নিত হবেন। আবার কেউ কেউ মনে করেন, ইসরায়েলকে ‘একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র’ হিসেবে অভিহিত করে তিনি নৈতিক ও আইনি পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়েছেন। এর আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) গাজায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার পর, গত এপ্রিলে প্রথম ইউরোপীয় নেতা হিসেবে মিতসোটাকিস ইসরায়েল সফরে গিয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন।

ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ওসগুড হল ল স্কুলের অনুষদ সদস্য হেইডি ম্যাথিউস, কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডনের ইসরায়েলি বংশোদ্ভূত অধ্যাপক নেভ গর্ডন এবং অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের নরওয়েজিয়ান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটসের আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ জেন্টিয়ান জাইবেরি আনাদোলু এজেন্সির সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছেন।

আইনি উদ্বেগ ও অস্ত্র পরিবহনে সহায়তার অভিযোগ

হেইডি ম্যাথিউস বলেন, ‘ইসরায়েল ও গ্রিক সাইপ্রাস প্রশাসনের সঙ্গে যৌথ শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে এথেন্স বুঝিয়ে দিয়েছে যে, তারা আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার চেয়ে নিজেদের আঞ্চলিক রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।’

তিনি অভিযোগ করেন, গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যায় গ্রিসের পরোক্ষ সহায়তার ইতিহাস রয়েছে। বিশেষ করে গ্রিক জলসীমা ও বন্দর ব্যবহার করে সামরিক কার্গো এবং দ্বৈত ব্যবহারের সামগ্রী পরিবহনের সুযোগ করে দেওয়ার মাধ্যমে এই সহায়তা করা হচ্ছে।

ম্যাথিউস জানান, ‘ওশান গ্ল্যাডিয়েটর’ নামের একটি জাহাজে করে হেরাক্লিয়ন বন্দর ব্যবহারের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে গ্রিক আইনজীবীরা সম্প্রতি সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিক চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন। তারা অভিযোগ করেছেন, এটি অস্ত্র বাণিজ্য চুক্তির লঙ্ঘন। জাহাজটিতে ইসরায়েলের উদ্দেশ্যে ১,৬০০ টনেরও বেশি মার্কিন গোলাবারুদ ছিল, যা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের গণহত্যামূলক যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে অন্যতম বড় চালান হিসেবে বিবেচিত। আইনি চ্যালেঞ্জের কারণে জাহাজটি তার নির্ধারিত রুট পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের রেজোলিউশন ২৮০৩, যা গাজার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনাকে সমর্থন করে, তা গ্রিসকে এই পদক্ষেপে উৎসাহিত করেছে বলে মনে হচ্ছে। তবে ম্যাথিউস বলেন, ‘তথাকথিত যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা অব্যাহত রয়েছে।’

তিনি জানান, আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) রায় অনুযায়ী, তৃতীয় কোনো রাষ্ট্র এমন কোনো পদক্ষেপ নিতে পারবে না যা অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের অবৈধ উপস্থিতিকে স্বীকৃতি দেয়। এই প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলের সঙ্গে নিরাপত্তা ও সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করে গ্রিস ফিলিস্তিনের প্রতি তার আন্তর্জাতিক আইনি বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করছে।

যুদ্ধাপরাধে সহায়তার সতর্কতা

ইসরায়েলি বংশোদ্ভূত পণ্ডিত নেভ গর্ডন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে দেখা করে প্রধানমন্ত্রী মিতসোটাকিস দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী আইনি কাঠামো ধ্বংস করতে অবদান রাখছেন।’

তিনি উল্লেখ করেন যে, নেতানিয়াহু আইসিসি কর্তৃক একজন ফেরারি আসামি। বিশ্বনেতাদের উচিত তাকে সম্মান জানানোর পরিবর্তে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা। তিনি মন্তব্য করেন, ‘এর ফলে মিতসোটাকিস আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অপরাধে অপরাধী হচ্ছেন।’

আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞদের প্রত্যাশা

আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ জেন্টিয়ান জাইবেরি বলেন, কোনো রাষ্ট্রপ্রধান যখন ইসরায়েল সফরে যান, তখন তাদের কাছে একটিই প্রত্যাশা থাকে। তিনি বলেন, ‘যেকোনো দেশের সরকারপ্রধানের এমন সফরের ক্ষেত্রে আমার একটাই মন্তব্য, তাদের উচিত ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার অনুরোধ করা।’

তিনি আরও উল্লেখ করেন, এই বাধ্যবাধকতার মধ্যে রয়েছে অক্টোবরে পৌঁছানো যুদ্ধবিরতি মেনে চলা, পর্যাপ্ত মানবিক সহায়তা (ঔষধ ও তাবুসহ) পৌঁছানোর অনুমতি দেওয়া, অবৈধ বসতি স্থাপন বন্ধ করা এবং গত বছর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অনুরোধ অনুযায়ী অবৈধ দখলদারিত্বের অবসান ঘটানো।

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.