সিরিয়ায় জুমার নামাজের সময় মসজিদে বিস্ফোরণ, নিহত ৮

সিরিয়ার হোমস শহরে শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) জুমার নামাজের সময় একটি মসজিদে বিস্ফোরণে অন্তত আটজন নিহত এবং ১৮ জন আহত হয়েছেন। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে।

সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সানা জানায়, হোমস শহরের ওয়াদি আল-দাহাব পাড়ার ইমাম আলী ইবনে আবি তালিব মসজিদে এ ঘটনা ঘটে। এলাকাটি মূলত দেশটির সংখ্যালঘু আলাউয়ি সম্প্রদায়ের মানুষের বসতি হিসেবে পরিচিত।

সানার প্রকাশিত ছবিতে মসজিদের ভেতরে ধ্বংসযজ্ঞের ভয়াবহ চিত্র দেখা গেছে। এতে দেখা যায়, দেয়ালগুলো পুড়ে গেছে, জানালার কাঁচ চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে ছড়িয়ে আছে এবং মেঝের কার্পেটে রক্তের দাগ। গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে সানা জানিয়েছে, মসজিদের ভেতরে বিস্ফোরক রেখে এই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। বিস্ফোরণ থেকে বেঁচে যাওয়া প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নামাজের সময় হঠাৎ বিস্ফোরণে মসজিদে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেক মানুষ আহত অবস্থায় বাইরে বেরিয়ে আসেন।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘটনার পর নিরাপত্তা বাহিনী মসজিদ এলাকা ঘিরে ফেলে এবং তদন্ত ও আলামত সংগ্রহ শুরু করে বলে জানায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তাৎক্ষণিকভাবে হামলার জন্য দায়ী কারা, তা স্পষ্ট নয় বলে হোমস প্রদেশের গণমাধ্যম দপ্তর জানিয়েছে। তবে ‘সারায় আনসার আল-সুন্নাহ’ নামের সুন্নি উগ্রপন্থি একটি গোষ্ঠী টেলিগ্রামে হামলার দায় স্বীকার করেছে। তারা জানিয়েছে, অন্য একটি অজ্ঞাত গোষ্ঠীর সহযোগিতায় তারা এই হামলা চালিয়েছে।

গত জুন মাসে দামেস্কে একটি গির্জায় ভয়াবহ বোমা হামলার মাধ্যমে এই গোষ্ঠীটি প্রথম আলোচনায় আসে। পর্যবেক্ষকদের ধারণা, এটি উগ্রবাদী সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) একটি ছদ্মবেশী দল হতে পারে। গোষ্ঠীটি গত কয়েক মাস নিষ্ক্রিয় থাকার পর আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা মূলত সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং সাবেক বাশার আল-আসাদ সরকারের অনুসারীদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে আসছে।

সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই কাপুরুষোচিত কাজ মানবিক ও নৈতিক মূল্যবোধের ওপর চরম আঘাত। এটি দেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করার অপচেষ্টা।

সিরিয়ার দীর্ঘদিনের শাসক বাশার আল-আসাদ নিজে আলাউয়ি সম্প্রদায়ের সদস্য ছিলেন। এক বছর আগে বিদ্রোহী বাহিনীগুলোর হাতে আসাদ সরকারের পতন ঘটে। এরপর থেকেই দেশটিতে বিভিন্ন সময় সাম্প্রদায়িক সহিংসতা দেখা দিচ্ছে। আসাদ ও তার পরিবার বর্তমানে রাশিয়ায় রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন। গত মার্চ মাসেও নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে লাতাকিয়া প্রদেশে কয়েক ডজন আলাউয়ি সম্প্রদায়ের মানুষকে হত্যার অভিযোগ উঠেছিল।