মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিবের ১৫ বছরের কারাদণ্ড

অর্থ পাচার ও ক্ষমতার অপব্যবহারের দায়ে মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিক রাজাককে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির আদালত। এটি বহুজাতিক আর্থিক কেলেঙ্কারি ‘ওয়ান মালয়েশিয়া ডেভেলপমেন্ট বেরহাদ’ (১এমডিবি) সংক্রান্ত তার দ্বিতীয় বৃহত্তম বিচার।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৭২ বছর বয়সী নাজিব রাজাকের বিরুদ্ধে প্রায় ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত (প্রায় ৫৬৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) আদালত তাকে চারটি ক্ষমতার অপব্যবহার এবং ২১টি অর্থপাচারের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেন। ১এমডিবি-সংক্রান্ত আরেক মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে তিনি ইতিমধ্যে কারাগারে রয়েছেন। সর্বশেষ রায়টি আসে সাত বছর ধরে চলা বিচারপ্রক্রিয়া শেষে, যেখানে ৭৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।

মালয়েশিয়ার প্রশাসনিক রাজধানী পুত্রাজায়ায় দেওয়া এই রায়ে আদালত ক্ষমতার অপব্যবহারের চারটি অভিযোগে প্রত্যেকটিতে ১৫ বছর এবং অর্থপাচারের ২১টি অভিযোগে প্রত্যেকটিতে পাঁচ বছরের সাজা দেন। দেশটির আইনে এসব সাজা একসঙ্গে কার্যকর হবে। গত সোমবার আদালত নাজিবের অবশিষ্ট সাজা গৃহবন্দী অবস্থায় ভোগ করার আবেদনও খারিজ করে দেন। তবে তার এখনো একদল অনুগত সমর্থক রয়েছে। শুক্রবার রায়ের সময় পুত্রাজায়ার আদালতের বাইরে নাজিবের সমর্থনে কয়েক ডজন মানুষ জড়ো হন। তাদের দাবি, তিনি অন্যায় বিচারের শিকার।

১এমডিবি কেলেঙ্কারি প্রায় এক দশক আগে প্রকাশ্যে আসে। এটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। তদন্তকারীদের মতে, রাষ্ট্রীয় এই তহবিল থেকে প্রায় ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিভিন্ন ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে পাচার করা হয়, যার একটি অংশ নাজিবের হিসাবেও জমা হয়।

তার আইনজীবীদের দাবি, তিনি তার উপদেষ্টাদের, বিশেষ করে অর্থলগ্নিকারক জো লোর মাধ্যমে বিভ্রান্ত হয়েছিলেন। তবে মালয়েশিয়ার আদালত এই যুক্তি গ্রহণ করেননি। এর আগে ২০২০ সালে তাকে ৪২ মিলিয়ন রিঙ্গিত আত্মসাতের মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং ১২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এই সাজা পরে কমানো হয়েছে।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম সব রাজনৈতিক পক্ষকে আদালতের রায় সম্মান করার আহ্বান জানিয়েছেন। সাবেক আইনপ্রণেতা টনি পুয়া বলেন, এই রায় দেশের নেতাদের জন্য একটি বার্তা— প্রধানমন্ত্রী হলেও দুর্নীতির দায়ে শাস্তি এড়ানো যায় না। তবে দুর্নীতিবিরোধী কর্মী সিনথিয়া গ্যাব্রিয়েল বলেন, ১এমডিবি কেলেঙ্কারির পরও দেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি হয়নি এবং বড় ধরনের দুর্নীতি বিভিন্ন রূপে চলমান।