লাঙ্গলের দখল ও নৌকার ভোট: জাতীয় পার্টিতে নতুন মেরুকরণ
- Details
- by ২৪ ডেস্ক
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাঠ থেকে আওয়ামী লীগ ছিটকে পড়ার পর দলটির বিশাল ভোটব্যাংক এখন রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। আসন্ন নির্বাচনে এই ‘রিজার্ভ’ ভোট নিজেদের বাক্সে টানতে মরিয়া হয়ে উঠেছে জাতীয় পার্টির বিবদমান দুটি অংশ। একদিকে রয়েছেন জি এম কাদের, অন্যদিকে আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নেতৃত্বে গঠিত নতুন জোট।

মূলত জুলাই অভ্যুত্থানের পটপরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগের নির্বাচনী কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকায় তাদের সমর্থক গোষ্ঠীর ভোট কোন দিকে যাবে, তা নিয়ে চলছে নানামুখী সমীকরণ। অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগকে নির্বাচনের বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত স্পষ্ট করার পর থেকেই জাতীয় পার্টির দুই অংশ নিজেদেরকে সেই শূন্যস্থানের দাবিদার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ঐতিহাসিকভাবেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির একটি সখ্য বা বোঝাপড়ার সম্পর্ক বিদ্যমান। ১৯৯৬ সালে দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় ফেরার পেছনে জাতীয় পার্টির সমর্থন ছিল। পরবর্তী সময়ে ২০০৮ সালের নির্বাচনেও তারা জোটবদ্ধ হয়ে অংশ নেয়। এমনকি বিগত তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনেও এরশাদের দলটি আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়ে সরকারের অংশীদার ছিল। এই দীর্ঘদিনের সম্পর্কের জের ধরেই এখন আওয়ামী লীগের ফেলে যাওয়া ভোটের ওপর নজর দিয়েছে তারা।
এদিকে আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নেতৃত্বে গঠিত নতুন জাতীয় পার্টি ইতিমধ্যে বেশ কিছু প্রভাবশালী নেতাকে নিজেদের দলে ভিড়িয়েছে। বিশেষ করে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জেপি তাদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েছে। ‘জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট (এনডিএফ)’ নামের এই জোটে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত মিলিয়ে মোট ১৮টি দল রয়েছে। জোটটি ইতিমধ্যে ১১৯টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে।
এই নতুন জোটের মনোনয়ন বাছাইয়ে দেখা যায়, তাদের তালিকায় অন্তত ১৮ জন সাবেক সংসদ সদস্য রয়েছেন। এ ছাড়া সাতজন রয়েছেন যারা বিভিন্ন সময়ে মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। সরকার ও রাজনৈতিক মহলের একাংশের ধারণা, আনিসুল ইসলাম মাহমুদের এই অংশটি প্রশাসনের কিছুটা আনুকূল্য পাচ্ছে। জামায়াতের বিকল্প শক্তি হিসেবেও কেউ কেউ তাদের বিবেচনা করছেন।
বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে জি এম কাদেরের শিবিরে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ভাই হওয়া সত্ত্বেও বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বেশ কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছেন তিনি। অন্তর্বর্তী সরকারের সংলাপে ডাক না পাওয়া এবং ১৬ মাসে কোনো উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে না পারা দলটিকে বেশ চাপে ফেলেছে। এর ওপর কাকরাইলে তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে একাধিকবার হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
তবে দলের প্রতীক ‘লাঙ্গল’ শেষ পর্যন্ত কার হাতে থাকবে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা থাকলেও বিশ্লেষকদের অধিকাংশের মত, এটি জি এম কাদেরের কাছেই থাকার সম্ভাবনা প্রবল। রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও নীলফামারীসহ উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে এরশাদের প্রতি সাধারণ মানুষের আবেগের কারণে জি এম কাদের সেখানে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে থাকতে পারেন।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৪৮ শতাংশ এবং ২০০১ সালে ৪০ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। সম্প্রতি প্রথম আলোর এক জরিপে দেখা গেছে, ২৮ শতাংশ মানুষ এখনো আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে রাখার পক্ষে। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর সমর্থন নিজেদের দিকে টানতে পারলে নির্বাচনে বড় ব্যবধান গড়া সম্ভব বলে মনে করছেন জাপার নেতারা।
জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন অংশটি ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে এবং মনোনয়ন ফরম বিক্রি করছে। তবে বিগত সময়ের তুলনায় ফরম বিক্রির হার বেশ কম। দলে বর্তমানে পরিচিত মুখের সংকটও প্রকট। যদিও সাবেক মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা এবং সাবেক সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ মণ্ডল দলে ফিরে আসায় কর্মীদের মধ্যে কিছুটা চাঙ্গাভাব লক্ষ করা যাচ্ছে।
আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। শেখ হাসিনা গত বছরের ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে নেতৃত্বহীন আওয়ামী লীগের সমর্থকরা এখন কোন দিকে ঝুঁকবেন, তার ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছু। জাতীয় পার্টির যে অংশটি এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক নিজেদের আয়ত্তে আনতে পারবে, নির্বাচনী দৌড়ে তারাই এগিয়ে থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.