ট্রাম্পের ১৫ বছরের প্রস্তাবে না, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে যা চাইলেন জেলেনস্কি

ইউক্রেনকে ১৫ বছরের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দিতে প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র। তবে এই প্রস্তাবকে অপর্যাপ্ত উল্লেখ করে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ৩০ থেকে ৫০ বছরের দীর্ঘমেয়াদি নিশ্চয়তা দাবি করেছেন। রাশিয়ার ভবিষ্যৎ আগ্রাসন কার্যকরভাবে ঠেকাতে এই দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষা প্রয়োজন বলে মনে করছেন তিনি।

সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) সাংবাদিকদের কাছে পাঠানো এক অডিও বার্তায় জেলেনস্কি বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে বলেছি, আমরা যুদ্ধে আছি প্রায় ১৫ বছর ধরে। তাই এই গ্যারান্টি বা নিশ্চয়তার মেয়াদ আরও বাড়াতে হবে। ৩০, ৪০ বা ৫০ বছরের নিশ্চয়তা পাওয়া গেলে সেটি হবে একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত।’ তিনি আরও জানান, বর্তমান শান্তি পরিকল্পনায় ১৫ বছরের কথা উল্লেখ থাকলেও তা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের মতে, মার্কিন কংগ্রেস অনুমোদিত নিরাপত্তা নিশ্চয়তা এবং ‘কোয়ালিশন অব দ্য উইলিং’-এর সদস্য দেশগুলোর অঙ্গীকার মিলেই দেশটির প্রকৃত সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারে। এর পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদও সামগ্রিক নিরাপত্তা কাঠামোর গুরুত্বপূর্ণ অংশ হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি আরও বলেন, ‘যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব নেবে ইউক্রেনের মিত্ররা। প্রযুক্তিগত নজরদারি ও মাঠপর্যায়ে উপস্থিতিসহ সব বিষয়ই নিরাপত্তা নিশ্চয়তার অংশ হবে।’ শক্তিশালী মার্কিন নিরাপত্তা নিশ্চয়তার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে আলোচক দলগুলো একমত হয়েছে বলেও তিনি জানান।

এই মন্তব্যগুলো এসেছে রোববার যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের মার-আ-লাগো রিসোর্টে দুই নেতার বৈঠকের পর। বৈঠক শেষে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘প্রায় চার বছর ধরে চলা ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানে অনেকখানি অগ্রগতি হয়েছে।’ তবে দুই নেতাই স্বীকার করেন যে, এখনো বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অমীমাংসিত রয়ে গেছে।

অমীমাংসিত বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে পূর্ব ইউক্রেনের দখলকৃত অঞ্চলগুলোর ভবিষ্যৎ এবং বর্তমানে রুশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের অবস্থান। জেলেনস্কি জানান, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ডনবাস অঞ্চল থেকে ইউক্রেনীয় বাহিনী প্রত্যাহারের দাবিতে কোনো সমঝোতা হয়নি।

পূর্ব ইউক্রেনে সম্ভাব্য একটি নিরস্ত্রীকৃত অঞ্চল বা মুক্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠনের মার্কিন প্রস্তাব নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে। বিশেষ করে ওই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে থাকবে, সে বিষয়ে কোনো স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি।

ট্রাম্প বলেন, ‘একটি চুক্তি অনেকটাই কাছাকাছি চলে এসেছে, যদিও আলোচনা শেষ হতে আরও কয়েক সপ্তাহ লাগতে পারে এবং এর কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই।’ অন্যদিকে জেলেনস্কি বলেন, ‘শান্তি পরিকল্পনার প্রায় ৯০ শতাংশ বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে।’

ট্রাম্প আরও জানান, জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের আগে তিনি পুতিনের সঙ্গে খুবই ফলপ্রসূ ফোনালাপ করেছেন। পরে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গেও কথা বলেন। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছেন, পুতিন ও ট্রাম্প শিগগিরই আবার ফোনে কথা বলবেন।

এদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সোমবার সামরিক কমান্ডের সঙ্গে সপ্তম বৈঠকে ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর অগ্রগতির কথা তুলে ধরেন। তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে আরও এলাকা দখলের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেন।

জেলেনস্কি বলেন, ‘জানুয়ারিতে ইউরোপীয় অংশীদারদের সঙ্গে এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে একটি বৈঠক চায় ইউক্রেন। এরপর একটি বা অন্য কোনো কাঠামোয় রুশ প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাদা বৈঠকের পরিকল্পনাও রয়েছে।’

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ জানিয়েছেন, জানুয়ারির শুরুতে ‘কোয়ালিশন অব দ্য উইলিং’-এর বৈঠক হবে, যেখানে ইউক্রেনকে সহায়তা অব্যাহত রাখার বিষয়ে আলোচনা হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে চলা কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় বড় কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় ট্রাম্প জানিয়েছেন, চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত না হলে তিনি ইউক্রেন ও রাশিয়ার নেতাদের সঙ্গে আর বৈঠকে বসবেন না। এখন পর্যন্ত আলোচনার বেশিরভাগই তার বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ও জ্যারেড কুশনারের মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছে।