বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী, বিএনপির চেয়ারপারসন ও ‘আপসহীন নেত্রী’ হিসেবে পরিচিত খালেদা জিয়া আর নেই। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তার প্রয়াণে বাংলাদেশের রাজনীতির এক দীর্ঘ, বর্ণিল ও সংগ্রামী অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটল।

খালেদা জিয়া

দলীয় ও হাসপাতাল সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে তিনি লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, আর্থ্রাইটিসসহ একাধিক জটিল রোগে ভুগছিলেন। মঙ্গলবার ভোরে হঠাৎ তার রক্তচাপ মারাত্মকভাবে কমে যায় এবং শ্বাসকষ্ট তীব্র আকার ধারণ করে। চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত তাকে রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। মৃত্যুসংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পরপরই সারা দেশে শোকের আবহ নেমে আসে। এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে ভিড় করেন হাজারো নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ।

খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবনের একটি বড় অংশ কেটেছে কারাগারে। মোট পাঁচবার কারাবরণ করা এই নেত্রীর বন্দিজীবন ছিল রাজনৈতিক সংগ্রাম, ধৈর্য ও আত্মত্যাগের প্রতীক।

এরশাদবিরোধী আন্দোলন ও প্রথম গ্রেপ্তার
১৯৮২ সালে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার পর স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে তাকে একাধিকবার গ্রেপ্তার হতে হয়। ১৯৮৩ সালের ২৮ নভেম্বর, ১৯৮৪ সালের ৩ মে এবং ১৯৮৭ সালের ১১ নভেম্বর এই তিন দফা গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়েই তিনি রাজনীতিতে ‘আপসহীন নেত্রী’ হিসেবে পরিচিতি পান।

এক-এগারো ও সংসদ ভবনের সাবজেল

২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর এক-এগারোর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সময় সেনানিবাসের মইনুল রোডের বাসভবন থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় স্থাপিত বিশেষ সাবজেলে বন্দী রাখা হয় তাকে।

এই কারাবাসে তিনি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা দুটি ঈদই কাটান বন্দিদশায়। সে সময় তার দুই পুত্র তারেক রহমান ও প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোও কারাগারে ছিলেন। ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে খালেদা জিয়ার মায়ের মৃত্যুতে মাত্র ছয় ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি পেয়ে শেষবারের মতো মায়ের মুখ দেখার সুযোগ পান তিনি। প্রায় এক বছর বন্দি থাকার পর ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি লাভ করেন।

নাজিমুদ্দিন রোডের নিঃসঙ্গতা

খালেদা জিয়ার কারাজীবনের সবচেয়ে কঠিন অধ্যায় শুরু হয় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ার পর তাকে নেওয়া হয় নাজিমুদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে। সেখানে তিনি ছিলেন একমাত্র বন্দি। স্যাঁতসেঁতে ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তার শারীরিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি ঘটে।

পরবর্তীতে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ করোনা মহামারির প্রেক্ষাপটে সরকার নির্বাহী আদেশে তার সাজা স্থগিত করে বাসায় থাকার অনুমতি দেয়। তবে গুলশানের ‘ফিরোজা’ বাসভবনে অবস্থান করলেও সেটি কার্যত গৃহবন্দিত্বের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।

গণ-অভ্যুত্থান ও সম্মানজনক মুক্তি

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ রাজনৈতিক সংকটের অবসান ঘটে। এরপর রাষ্ট্রপতির বিশেষ আদেশে খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকুফ করা হয়। দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে চলতি বছরের ২৭ নভেম্বর তিনি সব মামলা থেকে সসম্মানে খালাস পান।

খালেদা জিয়া তিনবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। নারী শিক্ষায় উপবৃত্তি চালু, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার বিকাশ এবং বহুদলীয় গণতন্ত্র রক্ষায় তার ভূমিকা ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তার মৃত্যুতে বিএনপি সাত দিনের রাষ্ট্রীয় শোক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

একটি দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনের ইতি টেনে খালেদা জিয়া ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিলেন একজন আপসহীন, দৃঢ়চেতা ও বিতর্কিত হলেও প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেত্রী হিসেবে।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.