আপনি পড়ছেন

জিম্বাবুয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবেকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ইরাকের সাদ্দাম হোসেনের মতো সামরিক হস্তক্ষেপের কথা ভেবেছিল তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার। টনি ব্লেয়ার প্রশাসনের ওই পরিকল্পনার বিষয়টি সম্প্রতি প্রকাশিত যুক্তরাজ্যের সরকারি গোপন নথিতে উঠে এসেছে। যদিও শেষ পর্যন্ত বিষয়টিকে ‘গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিকল্প নয়’ বলে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল।

রবার্ট মুগাবে

ন্যাশনাল আর্কাইভস থেকে প্রকাশিত ওই নথিতে দেখা যায়, ২০০৫ সালের জিম্বাবুয়ের সংসদ নির্বাচনের আগে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তর মুগাবের বিরুদ্ধে বিভিন্ন নীতিমালার রূপরেখা নিয়ে কাজ করছিল। মুগাবের ক্রমাগত স্বৈরাচারী হয়ে ওঠা, অর্থনৈতিক ধস এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো মোকাবিলার জন্য এই বিকল্পগুলো ভাবা হয়েছিল।

ব্রিটিশ গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিবেচিত বিকল্পগুলোর মধ্যে ছিল কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ, সহায়তা বন্ধ, জিম্বাবুয়ের সম্পদ জব্দ এবং ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করা। তবে সবচেয়ে চরম দৃশ্যপটে যে পরিকল্পনাটি ছিল তা হলো—‘সাদ্দামের সঙ্গে আমরা যা করেছি, মুগাবের সঙ্গেও তাই করা।’

‘জিম্বাবুয়ে: পলিসি অপশনস’ বা নীতিমালা সংক্রান্ত বিকল্প নামের এই ব্রিফিংটি ২০০৪ সালের জুলাই মাসে ডাউনিং স্ট্রিটের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক উপদেষ্টা লরি লি-র কাছে পাঠানো হয়েছিল। হারারেতে নিযুক্ত তৎকালীন বিদায়ী ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত ব্রায়ান ডনেলির একটি কঠোর প্রতিবেদনের পর এটি প্রস্তুত করা হয়। ডনেলি সতর্ক করে বলেছিলেন যে ব্রিটিশ নীতি গণতান্ত্রিক পরিবর্তন আনতে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, যদি মুগাবে ২০০৫ সালের নির্বাচনে জেতেন, তবে ‘আমাদের একটি আমূল নতুন পদক্ষেপের কথা ভাবা উচিত।’

তবে ডনেলি সামরিক পদক্ষেপের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘জনশৃঙ্খলার চরম অবনতি না হলে সশস্ত্র হস্তক্ষেপ অযৌক্তিক। আর তা হলেও এটি ব্রিটিশ নয়, বরং আফ্রিকান নেতৃত্বাধীন হওয়া উচিত।’ তিনি লিবিয়ার কর্নেল গাদ্দাফির সঙ্গে টনি ব্লেয়ারের সম্পর্কের আদলে মুগাবের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের পরামর্শ দিয়েছিলেন।

পররাষ্ট্র দপ্তরের নথিতে সামরিক পদক্ষেপের ঝুঁকিগুলো বিশদভাবে তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, ‘আফগানিস্তান, ইরাক এবং যুগোস্লাভিয়া থেকে আমরা জানি যে, বাইরে থেকে সরকার বা তাদের খারাপ নীতি পরিবর্তন করা প্রায় অসম্ভব। যদি আমরা সত্যিই জিম্বাবুয়ের পরিস্থিতির পরিবর্তন চাই, তবে আমাদের মুগাবের সঙ্গে তা-ই করতে হবে যা আমরা সাদ্দামের সঙ্গে করেছি।’

নথিতে শেষ পর্যন্ত এই নীতি অগ্রহণযোগ্য বলে উপসংহার টানা হয়। কারণ হিসেবে বলা হয়, ব্রিটেনকে এই পদক্ষেপ একা নিতে হবে, এর কোনো সুস্পষ্ট নির্গমন কৌশল (এক্সিট স্ট্র্যাটেজি) থাকবে না এবং এতে ব্রিটিশ নাগরিকদের জীবন বিপন্ন হতে পারে। এছাড়া আফ্রিকান দেশগুলো ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এর বিরোধিতা করবে এবং জাতিসংঘের অনুমোদন ছাড়া এই হস্তক্ষেপ অবৈধ হবে বলেও নথিতে উল্লেখ করা হয়।

এর পরিবর্তে মুগাবে সরকারকে আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন রাখা এবং গণতান্ত্রিক বিরোধীদের গোপনে সমর্থন দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। একটি হাতে লেখা নোটে টনি ব্লেয়ার নির্বাচনের আগ পর্যন্ত মুগাবের সমালোচনা অব্যাহত রাখা এবং পরবর্তীতে পুনরায় সম্পর্ক স্থাপনের সম্ভাবনাসহ এই কৌশলের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন।

উল্লেখযোগ্য যে, ২০১৭ সালে ৯৩ বছর বয়সে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগ পর্যন্ত মুগাবে ক্ষমতায় ছিলেন। ২০১৯ সালে সিঙ্গাপুরে ৯৫ বছর বয়সে তিনি মারা যান। অভ্যুত্থানের পর তার সাবেক ভাইস-প্রেসিডেন্ট এমারসন এমনি নানগাগওয়া ক্ষমতায় আসেন এবং বর্তমানেও তিনি জানু-পিএফ সরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.