এফডিসিতে বাড়ছে বিতর্ক কমছে শুটিং

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা (এফডিসি)। দেশীয় ঐতিহ্য সংস্কৃতি মূল্যবোধ সংরক্ষণসহ সুস্থ বিনোদনমূলক ছবি নির্মাণে নির্মাতার সহায়তা ও অনুপ্রেরণা দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এফডিসি। তাই নামটির সঙ্গেই কেমন একটা স্বপ্ন জড়িয়ে রয়েছে। প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই সাধারণ মানুষের কাছে এফডিসি মানে বিশেষ কিছু। ঢাকাই সিনে তারকাদের উজ্জ্বল উপস্থিতির পাশাপাশি লাইট, ক্যামেরা আর অ্যাকশন ধ্বনিতে মুখরিত থাকায় অন্য এক আবহ থাকতো চিত্রপাড়ায়। এখানে প্রবেশ মানে কল্পনা আর স্বপ্নের রাজ্যে প্রবেশ। এখন দিন বদলেছে। এখন আর সুসময়ে নেই এই চিত্রপাড়া। এক প্রকার ধুঁকতে ধুঁকতে চলছে এর জীবন। ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধিরাম সরদারের মতোই চলছে এখনকার এফিডিসি।

চোখের সামনে এত বড় একটা প্রতিষ্ঠান ইতিহাস ঐতিহ্য থেকে ছিটকে পড়ে বেকার হয়ে পড়ছে। এফডিসির এ দূরাবস্থা নিয়ে কথা বলছে না কোনো শিল্পী ও নির্মাতারা। চুপ আছেন এফডিসির পরিচালকরাও। ফলে যে যার মতো এফডিসিকে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

কেপিআইভুক্ত এলাকা হলেও এখানে একাধিক সমিতি পরিচালিত হচ্ছে। সিনেমার উন্নয়ন স্বার্থে ও সমিতির নামে অফিস নিয়ে বসলেও সিনেমার উন্নয়নে কোনো কর্মকাণ্ডেই দেখা যাচ্ছে না তাদের। এদিকে সমিতির নির্বাচন ও নানা কর্মকাণ্ডে দলীয় রাজনীতি ঢুকে পড়ছে বলেও অভিযোগ করছেন অনেকে। ফলে এফডিসিতর উন্নয়ন বাদে হচ্ছে সব কিছুই। ফলে দিনে দিনে নষ্টদের দখলে চলে যাচ্ছে সিনেমা সংস্কৃতির এ প্রাণকেন্দ্র। হারাচ্ছে সিনেমার শুটিং। এখন এফডিসির বাইরেই ঢাকাই চলচ্চিত্রের শুটিং বেশি হয়।

অথচ কোটি টাকায় গড়া ভবনগুলোও বেকারই পড়ে থাকে। বাংলাদেশে বর্তমানে বছরে পঞ্চাশ থেকে ষাটটি চলচ্চিত্র মুক্তি পায়। এর মাঝে পূর্ণ বাণিজ্যিক ধারার সিনেমা ছাড়াও বিভিন্ন চ্যানেলের প্রযোজনাতেও মুক্তি পায় বেশকিছু চলচ্চিত্র। এর মধ্যে হাতেগুণা কয়েকটি মাত্র ছবির শুটিং হচ্ছে এফডিসিতে।

অথচ একটা সময় বছরে প্রায় দেড়শ ছবির শুটিং এফিডিসিতেই হতো। প্রতিষ্ঠানটি দেশীয় চলচ্চিত্রের নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে ষাট বছরের বেশি সময় পার করছে। শুধু বয়সই বেড়েছে। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যেতে পারেনি এফডিসি। তাই পিছিয়েই পড়ছে ক্রমেই।

দেশে একদিকে ভারতীয় সিনেমার বাজার আর স্যাটেলাইটের অনুষ্ঠানের প্রভাব, অন্যদিকে দর্শকদের রুচি ও চাহিদার পরিবর্তন ঘটেছে। এর সঙ্গে তাল মেলানো ও প্রযোজকদের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় একের পর শুটিং হারাচ্ছে এফডিসি। এক সময়ে বিভিন্ন ফ্লোরে একইসঙ্গে একাধিক সিনেমার কাজ চললেও এখন সেখানে দেখা যায় চ্যানেলগুলোর নানা আয়োজন। ঈদের এ সময়টায় এফডিসির নয়টি ফ্লোরেই সিনেমার শুটিং দিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা ছিল।

কিন্তু না। কোনো শুটিংই হচ্ছে না। মাঝে মাঝে শুটিং দেখা গেলেও সেটাও একান্ত দায় পড়েই। শুটিং না থাকলেও বর্তমানে বেশ আলোচনায় আছে এফডিসি। দলীয় কোন্দল, শিল্পী সমিতির নির্বাচনের ভোট গণনায় কারচুপি, দেশের শীর্ষ নায়ক শাকিব খানের ওপর কতিপয় নায়ক ও বহিরাগতদের হামলা, পরিচালক সমিতির বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ও সর্বশেষ নির্মাতা বদিউল আলম খোকনের বিরুদ্ধে নায়করাজ রাজ্জাককে নিয়ে অসম্মানসূচক কথা বলার অভিযোগ; এগুলো নিয়েই এখন এফডিসির 'ব্যস্ততা'। গণমাধ্যমও এফডিসির কোনো খবর না পেয়ে এগুলোই ফলাও করে প্রচার করছে। একের পর এক বিতর্ক নেতিবাচকভাবে দেশবাসীর সামনে উপস্থাপন করছে এফডিসিকে। অথচ এফডিসি হচ্ছে শুটিংয়ের জায়গা, শিল্প অনুশীলনের ক্ষেত্রে। সেদিকে নজর নেই কারও।