বোলিং ব্যর্থতায় ডুবলো ব্যাটিং, প্রস্তুতিতে হার বাংলাদেশের

তামিম ইকবাল দারুণ সেঞ্চুরি করে যে ভিত গড়ে দিয়েছিলেন, তার উপর দাঁড়িয়ে অন্য ব্যাটসম্যানরা গড়েছিলেন ৩৪১ রানের বিশাল পুঁজি। কিন্তু বোলারদের ব্যর্থতায় এবং শেষ ১০ ওভারে পাকিস্তানের অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ে এই পুঁজিতে রক্ষা পায়নি বাংলাদেশ। এজবাস্টনে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচে দুই উইকেটে হেরে গেছেন মাশরাফিরা।

শেষ দশ ওভারে পাকিস্তানের দরকার ছিলো ১০৯ রান। তাদের হাতে ছিলো চার উইকেট। এই অবস্থায় পাকিস্তানের পক্ষে বাজি ধরার মতো নিশ্চয় কেউ ছিলো না। কিন্তু ‘আনপ্রেডিক্টিবেল’ পাকিস্তান তাদের খেল দেখালো শেষ ১০ ওভারে। বাংলাদেশি বোলারদের সব পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দিয়ে ওভার প্রতি প্রায় ১১ রান করে নিতে থাকে তারা।

এর আগে তামিম ইকবালের ১০২, ইমরুল কায়েসের ৬১, মুশফিকুর রহিমের ৪৬ এবং মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ২৯ রানে ভর করে ৩৪১ রান করে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের হয়ে চার উইকেট নেন জুনাইদ।

৩৪২ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জেতা এই ম্যাচে পাকিস্তানের মূল নায়ক ফাহিম আশরাফ। এখনো ওয়ানডে অভিষেক না হওয়া ২৩ বছর বয়সী এই পাঞ্জাবি তরুণ ৩০ বলে ৬৪ রানের চোখ ধাঁধানো এক ইনিংস খেলে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান পাকিস্তানকে।

ফাহিম যদি হন মূল নায়ক, তবে পাকিস্তানের জয়ের ভিতটা গড়ে দিয়েছেন শোয়েব মালিক ও মোহাম্মদ হাফিজ। ৭৮ রানে তিন উইকেট পড়ে যাওয়ার পর, চতুর্থ উইকেটে ৭৯ রানের দারুণ এক জুটি গড়ে পাকিস্তানের পায়ের তলার মাটিটা শক্ত করে দেন তারাই।

হাফিজ ৪৯ রানে আউট হন। এই ইনিংস খেলতে তিনি খরচ করেন ৬২ বল। তার তুলনামূলক ধীর গতির ব্যাটিং পুষিয়ে দেন শোয়েব। তিনি ৬৬ বলে ৭২ রান করে যান।

এরপর অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ ও শাদাব খান দ্রুত আউট হয়ে গেলেও ইমাদ ওয়াসিম করে যান ৪৫ রান এবং তারপরই শুরু হয়ে ফাহিম আশরাফের মাধ্যমে পাকিস্তানের জয়ের স্বপ্ন দেখা। স্বপ্নটা সত্যি করার পথে ফাহিম তার সঙ্গী হিসেবে পেয়েছেন হাসান আলিকে। এই পেসারের ১৫ বলে খেলা ২৭ রানে ইনিংসটিও পাকিস্তানের জন্য কম তাৎপর্যপূর্ণ নয়।

শেষ পর্যন্ত তিন বল বাকি থাকতে দুই উইকেট অক্ষত রেখে জিতে যায় পাকিস্তান। যা আসলে বাংলাদেশের জন্য মূল টুর্নামেন্টের আগে এক সতর্কবার্তাই।

ইংল্যান্ডে এখন শুরু হয়ে গেছে গ্রীষ্ম। শীতের প্রকোপ এখনো পুরোপুরি শেষ হয়ে যায়নি। ধারণা করা হচ্ছিলো, এই রকম কন্ডিশনে বোলারদের দাপটই বেশি থাকবে। আজকের ম্যাচটি অবশ্য বাংলাদেশকে দিয়ে গেলো অন্য রকম শিক্ষা। পাকিস্তানের বিপক্ষে মাশরাফিদের আজকের ম্যাচটি হয়ে থাকলো রান উৎসবের এক প্রামাণ্যচিত্র।

ম্যাচের পরিণতিটা অবশ্য হতে পারতো অন্য রকম। কিন্তু বাংলাদেশি পেসারদের অগোছালো উপস্থিতি সেটা হতে দেয়নি। মূল দুই পেসার মাশরাফি ও তাসকিন আহমেদ যথাক্রমে ৯.৩ বলে দিয়েছেন ৬৮ ও নয় ওভারে ৮০ রান। ম্যাচ থেকে বাংলাদেশের ছিটকে যাওয়ার পিছনে এ দুজনের এমন বোলিংয়ের দায় অনেকখানি। সাত ওভারে ৪৬ রান দেয়া শফিউল ইসলামও তার এড়াতে পারবেন না। কিংবা ছয় ওভারে ৪১ রান দেয়া সাকিবকেও ওঠানো যায় কাঠগড়ায়।

তারপরও ম্যাচটি যেহেতু কেবলই প্রস্তুতির উপলক্ষ্য ছিলো, বাংলাদশের তাই সতর্ক হওয়ার সুযোগ আছে এখনো। বোলিংয়ের ব্যর্থতার কথা ভুলে গেলে, আজকের প্রস্তুতি ম্যাচ বাংলাদেশের জন্য আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে নেয়ার মঞ্চই ছিলো।