ফাহিম আশরাফ কেড়ে নিতে পারেন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সব আলো

ফাহিম আশরাফ, পাকিস্তান দলের নতুন তরুণ তুর্কি। এখনো ওয়ানডে অভিষেক হয়নি তার। তবে এর মধ্যেই আলোচনার শীর্ষে তিনি। মনে করা হচ্ছে, এক জুন থেকে শুরু হতে যাওয়া আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সব আলো কেড়ে নিতে পারেন তিনি।

কথাটা কিন্তু এমনি এমনি বলা হচ্ছে না। বাংলাদেশ- পাকিস্তানের প্রস্তুতি ম্যাচটার কথা যদি আপনার মনে থাকে, তাহলে ফাহিম আশরাফের ক্ষমতা সম্পর্কেও আপনার টুকটাক জানা হয়ে গেছে।

ওই ম্যাচে পাকিস্তানকে ৩৪২ রানের লক্ষ্য দিয়েও হেরে গেছে বাংলাদেশ। ম্যাচটিতে ২৪৯ রানে পাকিস্তানের আট উইকেট তুলে দারুণ এক জয়ের অপেক্ষায় ছিলেন মাশরাফিরা। এর মধ্যেই, নয় নম্বরে নেমে ৬৪ রানের অবিশ্বাস্য এক ইনিংস খেলে অপরাজিত থেকে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন ২৩ বছর বয়সী অলরাউন্ডার ফাহিম আশরাফ।

সঙ্গে সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে পাকিস্তানের অখ্যাত এক অঞ্চল কাসুরে জন্ম নেয়া ফাহিমের নাম। লাহোর থেকে বাসে করে কাসুর যেতে সময় লাগে ৪৫ মিনিট। ভারতীয় সীমান্তের খুব কাছের এলাকাটিতে জন্ম ফাহিম আশরাফের।

কাসুর এলাকাটিতে মনে রাখার মতো বিখ্যাত কেউ নেই, শুধুমাত্র সুফি সাধক বুল্লে শাহ ও নুর জাহান ছাড়া। বুল্লে শাহ মৃত্যু বরণ করেছেন ১৭৫৭ সালে। সুতরাং নতুন প্রজন্ম, যারা সুফি সাধণা বা দর্শনশাস্ত্রের প্রতি ততোটা অনুরাগী নয়, তারা তাকে চিনেই না। আর নুর জাহান হলেন পাকিস্তানের বিখ্যাত একজন সঙ্গীত শিল্পী।

এ দুজনের পর ফাহিম আশরাফই হয়তো হতে যাচ্ছেন কাসুরের বিখ্যাত মানুষ! কাসুরের হয়ে পাকিস্তান জাতীয় দলে এখনো কেউ খেলতে পারেননি। সুতরাং চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ওয়ানডে অভিষেক হয়ে গেলেই মোটামুটি কিংবদন্তি হয়ে যাবেন তিনি। তবে মনে হয় না, কেবল ওয়ানডে অভিষেকে সন্তুষ্ট থাকতে আবির্ভাব হয়েছে এই তরুণের!

আশরাফ ক্রিকেট খেলা শুরু করেন তার এলাকার হয়ে। ২০১০ সালে আন্তজেলা টুর্নামেন্টে অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ের টুর্নামেন্টে ১০ উইকেট শিকার করেন তিনি। ২০১১ সালে নেন ১৪ উইকেট। এরপর সেখান থেকে আশরাফের সুযোগ আছে ফয়সালাবাদ অনূর্ধ্ব-১৯ দলে। কিন্তু সুবিধা করতে পারেননি আশরাফ।

২০১৩ সালে সিনিয়র পর্যায়ের টুর্নামেন্টে নেন ২২ উইকেট। ব্যাট হাতে দুই হাফ সেঞ্চুরিতে করেন ১৮৯ রান। এই পারফর্ম্যান্সের পর প্রথম শ্রেনির ক্রিকেট খেলার সুযোগ আসে তার সামনে। ২০১৩-১৪ সালের কয়েদ-ই আজম ট্রফিতে ফয়সালাবাদের হয়ে খেলেন তিনি।

ফাহিম আশরাফের উত্থানের গল্পটা সেখান থেকেই শুরু। প্রথম শ্রেনির ম্যাচে অভিষেকেই মুলতানের বিপক্ষে দারুণ এক সেঞ্চুরি করেন তিনি। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত তিনি মোট ৩১টি প্রথম শ্রেনির ম্যাচ খেলে করেছেন ১২০৭ রান। বল হাতে নিয়েছেন ৯৪টি উইকেট। আর লিস্ট- এ খেলেছেন ৩৮টি। তাতে মোট রান ৩৮৮। বল হাতে নিয়েছেন ৬০টি উইকেট। 

এরপর পাকিস্তান ‘এ’ দলে সুযোগ মিলে যায় ফাহিমের। সেখানে দারুণ খেলে নির্বাচকদের নজর কাড়েন তিনি। চলতি বছরের শুরু থেকেই ফাহিম আশরাফের জাতীয় দলে ঢোকার সম্ভাবনা তৈরি হয়।

বহুদিন ধরেই একজন পেস বোলার অলরাউন্ডারের খোঁজে ছিলো পাকিস্তান। ধারণা করা হয়, সেই খোঁজের আপাত সমাপ্তি ঘটতে পারে ফাহিম আশরাফের মধ্যেই।

বাংলাদেশের বিপক্ষে অবিশ্বাস্য এক ইনিংস খেলে দলকে জেতানোর পর পাকিস্তানি মিডিয়াও মজে গেছে ফাহিম আশরাফ বন্দনায়। ক্রিকেট বিশ্লেষকরা মনে করছেন, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে পাকিস্তানের সফলতার মূল কারিগর হয়ে উঠতে পারেন এই তরুণ।