হিরোশিমা দিবস আজ

তখনো ঘুম থেকে জেগে ওঠেনি হিরোশিমার মানুষ। হঠাৎ দানবের মতো হিরোশিমার আকাশের নিলিমায় উদয় হলো মার্কিন বি-টুয়েন্টি নাইন বোমারু বিমান এনোলা গে। বিমান থেকে ফেলা বোমাটি প্রায় ৫শ মিটার উচুঁতে হিরোশিমায় বিস্ফোরিত হয়। ঘুমের মধ্যেই মারা যায় নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও যুবক। মাটির সঙ্গে মিশে যায় বেশিরভাগ দালান-কোঠা।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময় যুক্তরাষ্ট্রের তত্কালীন প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস ট্রুম্যানের নির্দেশে ১৯৪৫ সালের এই দিনে (৬ আগস্ট) জাপানের হিরোশিমা শহরে স্থানীয় সময় সকাল সোয়া আটটায় পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথমবারের মত এই পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। সেই ঘটনার ৭২তম বার্ষিকী আজ। জাপানিরা দিনটিকে পালন করে হিরোশিমা দিবস হিসেবে।

লিটল বয় নামের ওই পারমাণবিক বোমা হামলায় কমপক্ষে এক লাখ ৪০ হাজার মানুষ নিহত হয়। হিরোশিমায় হামলার তিন দিন পর নাগাসাকিতে আরেকটি পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করা হয়। এতে প্রায় ৭৪ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। তবে জাপানের আসাহি শিমবুনের এক হিসাবে বলা হয়েছে, বোমার প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট রোগসমূহের কারণে দুই শহরে চার লাখের মতো মানুষ মারা যায়। যাদের অধিকাংশই ছিলেন বেসামরিক।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যানের আত্মসমর্পণের আহ্বানে জাপান সাড়া না দেয়ায় তার নির্দেশেই ঠাণ্ডা মাথায় হিরোশিমায় চালানো হয় নারকীয় এই হামলা। এর উদ্দেশ্য ছিলো দুইটি। জাপানিদের জব্দ করা আর জাপানকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করা। হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে হামলার কিছুদিনের মধ্যে আত্মসমপর্ণ করে জাপান।

হামলার সাত দশক পার হয়ে গেলেও ভয়াল সেই দিনের কথা এখনো ভোলেনি জাপানের মানুষ। কারণ এখনো সেদিনের দুঃসহ স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছে হিরোশিমার ও নাগাসাকির মানুষ। আণবিক বোমা হামলার এতো বছর পরও শহর দুটোতে জন্ম নিচ্ছে বিকলাঙ্গ শিশু, ক্যান্সারসহ দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগছে বহু মানুষ।

দিবসটি পালনে দেশটির সরকার ও বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচি পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। প্রতিবছরের ন্যায় বিশ্বকে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত করার জোরালো আহ্বান আসবে এসব কর্মসূচি থেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউট অডিটরিয়ামে আজ সকাল ১০টায় জাপানী ভাষা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জাপান বাংলা পিস ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ জাপানী ভাষা শিক্ষক সমিতি উদ্যােগে এবছর পালন করা হবে হিরোশিমা দিবস। এতে জাইকা, জুয়াবসহ জাপান নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও জাপানিরা উপস্থিত থাকবেন।