ছিলেন রঙমিস্ত্রি, হয়ে গেলেন বাংলাদেশ ফুটবলের নতুন স্বপ্ন

মতিন মিয়ার গল্পটা রূপকথার গল্পের মতোই। ছিলেন সাধারণ রঙমিস্ত্রি। দরিদ্র বাবার সন্তান হওয়ায় সংসার চালাতে তাকেও মাথার ঘাম ফেলতে হতো পায়ে। দিনের দিনের পর দিন কেবল দেখতে হতো দিন বদলের স্বপ্ন। যদিও সে স্বপ্ন পূরণ করার পথ বা পাথেয়; কিছুই ছিলো না তার। আর এখন— সেই তিনিই বাংলাদেশের ফুটবলের নতুন স্বপ্ন!

মতিন মিয়ার অবিশ্বাস্য উত্থানের গল্পটা শুরু হবে হবে করেও যেনো আটকে ছিলো। ফুটবলীয় সহজাত প্রতিভা ছিলো আগে থেকেই। কিন্তু সুযোগ মিলছিলো না কোথাও। নিজ শহর সিলেটে ক্ষেপ খেলে খেলেই দিন কাটছিলো মতিনের। কিন্তু প্রতিভার ঝলক যেমন এক বৃত্তে বন্দি থাকে না, মতিনের ভাগ্য বা উত্থানের গল্পটাও তাই বেশিদিন আটকে থাকেনি।

২০১৪ সালে জাতীয় দলের ডিফেন্ডার এবং মতিনের স্থানীয় ইয়ামিন মুন্না তাকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। সুযোগ করে দেন সাইফ পাওয়ারটেক দলের হয়ে খেলার। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ঘরোয়া ফুটবল আসর পেশাদার লিগের দ্বিতীয় পর্যায়ে খেলে এক মৌসুমে পাঁচ লাখ টাকা পান মতিন। তার দারুণ পারফর্মে দল উঠে যায় প্রিমিয়ার লিগে। মতিনের মূল্য গিয়ে দাঁড়ায় ১৫ লাখে!

এরপর আর পিছনে তাকাতে হচ্ছে না এই তরুণকে। বরং ১৯ বছরের এই প্রতিভাকে বাংলাদেশের ভবিষ্যত বলে মানতে শুরু করেছেন ঘরোয়া ফুটবলের বড় বড় কোচ।

মতিন মূলত স্ট্রাইকার। একজন স্ট্রাইকারের যে গুণগুলো থাকা দরকার, তার খেলায় সেই গুণগুলো এতোটাই প্রখরভাবে আছে যে, কোচরা মনে করছেন, মতিনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ফুটবলে দক্ষ স্ট্রাইকারের জন্য যে চিরকালীন হাহাকার, তা ঘুচে যাবে।

মতিন যে দলে খেলেন, সাইফ পাওয়ারটেক, তার কোচ ব্রিটিশ টিম গ্র্যান্ট। বিদেশি এই কোচও মতিনকে নিয়ে প্রকাশ করেছেন উচ্ছ্বাস। তার মতে, ফিনিশিংয়ে আর একটু উন্নতি করতে পারলে মতিন হয়ে উঠবেন আরো ভয়ঙ্কর।

বাংলাদেশে এক সময় ফুটবলেরই ছিলো জয়জয়কার। কিন্তু জাতীয় দলের বাজে পারফর্ম, ঢিমেতালে চলা বাফুফে এবং আরো নানা জটিলাতায় ফুটবলের জায়গাটা দখল করে নিয়েছে ক্রিকেট। তারপরও এ দেশের মানুষ ফুটবল নিয়ে স্বপ্ন দেখা ছাড়তে পারেনি। কে জানে, মতিনই হয়তো কোটি মানুষের নতুন স্বপ্ন-সারথি হয়ে উঠছেন!