এমন চাপে আগে পড়েননি ‘নির্বাচক’ নান্নু

ঘরের মাঠে টেস্ট ক্রিকেটে মুমিনুল হকের গড় ৫৮-এর বেশি। তার ক্যারিয়ারের চার সেঞ্চুরির চারটিই ঘরের মাঠে। নিজ দেশে, চেনা কন্ডিশনে আরো একটা সিরিজের আগে মুমিনুল হতে পারতেন টেস্ট দলের অটোমেটিক চয়েস। কিন্তু তা হননি। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু দল ঘোষণা করলেন তাকে ছাড়াই। এরপরই সংবাদ মাধ্যমের কাছ থেকে একটার পর একটা তীর্যক প্রশ্ন উড়ে গেলো তার দিকে। এক পর্যায়ে প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে মেজাজও হারিয়ে ফেললেন তিনি। নির্বাচক হয়ে আসার পর এমন চাপে আর পড়েননি তিনি।

মুমিনুলকে নিয়ে করা প্রথম প্রশ্নের উত্তরে মিনহাজুল বলেন, ‘গত জানুয়ারি থেকে শ্রীলঙ্কা সিরিজ পর্যন্ত ছয় ইনিংসে তার হাফ সেঞ্চুরি মাত্র একটি। এমন পারফর্মের পর তাকে বিবেচনা করা হয়নি।’

কিন্তু ২২ টেস্টের অভিজ্ঞতা, ঘরের মাঠে পারফর্ম করার অতীত ইতিহাসও কি মুমিনুলকে দলে নেয়ার পিছনে যুক্তি হতে পারতো না? এমন প্রশ্নও যায় প্রধান নির্বাচক হিসেবে এর আগেও সামলোচিত হওয়া মিনহাজুলের দিকে। উত্তরে প্রশ্নকর্তাকে তিনি বলেন, ‘একজন খেলোয়াড়কে নিয়ে আমাকে এভাবে প্রশ্ন করতে পারেন না। আপনি যদি এভাবে প্রশ্ন করেন আমি উত্তর দিতে পারবো না। টিম ম্যানেজমেন্ট আছে। তারা সামগ্রিকভাবে যেটা ভালো মনে করেছে, সেই সিদ্ধান্তই নিয়েছে।’

একের পর এক টেস্টে দারুণ পারফর্ম করার কারণে এক সময় মুমিনুলের নাম হয়ে গিয়েছিলো ‘বাংলাদেশের ব্রাডম্যান’। ঘরের মাঠে তার ব্যাটিং সামর্থ্যকে ছোট করে দেখার কোনো সুযোগই নেই। ১৯৯৯ সালে এমন অবস্থা ছিলো মিনহাজুলের। তখনও তাকে বাদ দিয়েছিলেন নির্বাচকরা। পরে সংবাদ মাধ্যমের চাপ ও জনতার দাবির মুখে তাকে দলে নেয়া হয়।

মুমিনুলকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্তের সংবাদ সম্মেলনে সামনে এলো সেই প্রসঙ্গও। মুমিনুলকে বাদ দিয়ে মিনহাজুল নিজেকেই সমালোচিত করলেন কিনা— একটা প্রশ্নে জিজ্ঞেস করা হয় তা-ও। উত্তরে বেশ বিব্রতই ছিলেন প্রধান নির্বাচক। তিনি বলেন, ‘এভাবে বললে তো ঠিক হবে না। আপনারা পরিসংখ্যানে যাচ্ছেন না। সাম্প্রতিক সময়ে মুমিনুলের গড় ২৮-এ নেমে এসেছে। ও যেভাবে শুরু করেছিলো, তা ধরে রাখতে পারেনি। আর ওকে নিয়ে তো আমাদের চিন্তা আছেই। সে আমাদের পুলেরই খেলোয়াড়।’

দলেই যদি না নেয়া হয় তবে চিন্তা থেকে ঠিক কী লাভ, তা স্পষ্ট করেননি প্রধান নির্বাচক। তা স্পষ্ট করতে ব্যর্থ প্রধান কোচ, যাকে ভাবা হচ্ছে মুমিনুলের বাদ পড়ার পেছনের মূল কারণ, সেই চান্দিকা হাথুরুসিংহের কাছেও মুমিনুলকে নিয়ে স্পষ্ট বক্তব্য নেই।

তিনি কেবল বললেন, ‘আমি নির্দিষ্ট কোনো খেলোয়াড়কে প্রাধান্য দেই না। আমার প্রাধান্যের বিষয় বাংলাদেশ দল। আমি বাংলাদেশকে জেতাতে চেষ্টা করি। যারা বাদ পড়েছে, তাদের ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যায়নি।’

চান্দিকা ভুল বলেননি। ক্যারিয়ার শেষ হয়নি মুমিনুলের। কিন্তু তার ক্যারিয়ারের আছেটা কী! সীমিত ওভারের ফরম্যাটে সুযোগ না দিয়ে তাকে অনেক আগেই টেস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে দেয়া হয়েছে। এখন তো টেস্ট দলেও সুযোগ মিলছে না তার!