‘পশু নয় নিজেদের জীবন কুরবানী করছি আমরা!’

‌'ঈদের দিন পাজামা-পাঞ্জাবি পড়ে ঈদগাহে নামাজ পড়তে যাওয়া। নামাজ শেষে সবার সাথে কোলাকুলি করা। গরীব দুঃখীসহ প্রতিবেশী অভাবী মানুষকে সাধ্যমতো সাহায্য করা। ছোটদের হাতে নতুন টাকা দেয়া। খুকির হাতে মেহেদি দেয়া। ঈদের নামাজ শেষ করে পশু কুরবানীর মাধ্যমে নিজেদের পশুত্বকে ত্যাগ করা।'

এবারের কুরবানির ঈদে এসব আনুষ্ঠানিকতার কিছুই আসেনি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা মুসলমানদের জীবনে। সারা দেশে যেভাবে পশু কুরবানী করা হয়েছে সেভাবেই যেন রোহিঙ্গা মানুষকে ধরে ধরে হত্যা করছে বার্মিজ সেনাবাহিনী। রোহিঙ্গাদের অনেককে নির্যাতন করে পঙ্গু করে দেয়া হচ্ছে। হাত পা কেটে ফেলা হচ্ছে। এমনকি রাতের আধারে ঘর-বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে ঘুমন্ত অবস্থাতেই ভস্ম করে ফেলা হচ্ছে।

মিয়ানমারে সাম্প্রতিক সহিংসতায় কারো বাবা মারা গেছে, কারো ভাই, কারো স্বামী, কারো চোখের সামনে হত্যা করা হয়েছে সন্তানকে, নির্যাতন করা হয়েছে স্ত্রী-কন্যাকে। মাথা গোজার ঘর পর্যন্ত পুড়িয়ে ফেলায় তাদেরকে জীবন নিয়ে পালিয়ে আসতে হয়েছে বাংলাদেশে। জীবন নিয়ে ছুটে আসা এসব অসহায় মানুষের কাছে এবার ঈদ উদযাপনের জন্য চোখের পানি ছাড়া আর কিছুই ছিল না।

গত সপ্তাহে বিপদজনক সীমান্ত পাড়ি দিয়ে কক্সবাজার এসেছেন ৩৯ বছর বয়সী মকবুল হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমার বাড়িতে সবকিছুই ছিল... কিন্তু এখন আমি নিজেই একজন শরণার্থী। ঈদ উদযাপনের মত কিছুই অবশিষ্ট নেই আমার। তবে ঈদের নামাজ আদায় করা আমাদের দায়িত্ব।’ 

পালিয়ে আসা রাখাইন মুসলিম মোহাম্মদ আয়ুব জানান, ‘ঈদ করার মতো কোনো পরিস্থিতি আমাদের নেই। সেনাবাহিনী (মিয়ানমারের) আমাদের গ্রাম পুড়িয়ে দিয়েছে। পুরুষদের হত্যা আর নারীদের নির্যাতন করেছে। দেখামাত্র গুলি করে মেরে ফেলছে।’ এমন বর্বর পরিস্থিতির কারণে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে তারা বাংলাদেশে ছুটে এসেছেন। এ অবস্থায় আনন্দ করার মতো বা এক জায়গায় একত্রিত হয়ে খাওয়া-দাওয়া করার মতো পরিস্থিতি তাদের নেই, জানালেন মোহাম্মদ আইয়ুব।

পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শিশু আর নারীদের জন্য এবারের ঈদ ছিল সবচেয়ে বেশি কষ্টকর। কেননা বাস্তবতা যেন ঈদের দিনও তাদের জন্য শোক দিবসের মত করেই আবির্ভূত হয়েছিল। উৎসবের আনন্দ করা তো দূরে থাক মাথা গোজার ঠাঁই খুঁজতেই তারা ছিলেন দিশেহারা।

৬০ বছর বয়েসী কৃষক দ্বীন মোহাম্মদ চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বলেন, ‘আমি অন্যান্য বছর ঈদের সময় নিজের পালিত পশু কুরবানি করে থাকি। এ বছর পশু নেই, নিজেদের জীবন কুরবানী করছি আমরা! পুলিশ আমাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে। আমরা বাধ্য হয়ে পলিয়ে এসেছি।’

এএফপিসহ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম অবলম্বনে। অনুবাদ: এম.এস.আই খান