সামান্য বৃষ্টিতেই বিপর্যস্ত ধানমন্ডি-২৭, পারাপার ৫ টাকা

রাজধানীর অধিকাংশ এলাকা সামান্য বৃষ্টিতেই চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। কোথাও কোথাও হাটু থেকে কোমর পর্যন্ত পানি জমে যায়। দিনভর লেগে থাকে অসহনীয় যানজট। আর সামান্য বৃষ্টিতেই নগরবাসীর কাছে সবচাইতে দুর্ভোগের পয়েন্ট হিসেবে পরিচিত ধানমন্ডি-২৭ নম্বর রোড।

ধানমন্ডি-২৭ নম্বরে জনপ্রতি পাঁচ টাকায় চলছে পারাপার...

রাজধানীর এই অঞ্চলে সামান্য বৃষ্টি হলেই আসাদগেট থেকে ধানমন্ডি ২৭ মোড় পর্যন্ত পানি জমে যায়। এলাকাবাসীবা বলেন, 'ধানমন্ডির মূল সড়কের এই সমস্যা দীর্ঘদিনের। ১০/১৫ মিনিট বৃষ্টি হলেই পানি জমে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে রাস্তাটি। অনেক সময় জলাবদ্ধতায় নিচু যানবাহনগুলো বিকল হয়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি করে। ফলে গাবতলি টু নিউমার্কেট এবং মিরপুর টু নিউমার্কেট রোডে অসহনীয় জ্যাম লেগে যায়।

শুক্রবার সরেজমিন ঘটনাস্থলে দেখা যায়, মাত্র ১৫ মিনিটের বৃষ্টিতে হাঁটুপানির সৃষ্টি হয়েছে। ধানমন্ডি-২৭ থেকে আসাদগেট পর্যন্ত রাস্তার দুপাশে প্রচণ্ড যানজট। মিরপুর ১০ থেকে ধানমন্ডি আসা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আফরোজা পারভীন টোয়েন্টিফোর লাইভনিউজপেপারকে বলেন, 'মিরপুর থেকে ধানমন্ডি আসতে আড়াই ঘণ্টা লেগেছে। মিরপুর ১০ নম্বর গোলচক্করের পর খুব একটা জ্যাম পাইনি। কিন্তু মানিকমিয়া এভিনিউ থেকে শুরু হয়েছে জ্যাম। পরে এসে দেখি ২৭ নম্বরে এক হাঁটু পানি। এভাবেই চলছে ধানমন্ডি যাওয়া-আসা।'

কুড়িল বিশ্বরোড থেকে শুক্রবাদ এসেছেন বেসরকারি চাকুরিজীবী জামিল সরকার। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, 'নগরবাসীর কথা কেউ শোনার যেন কেউ নেই। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা এতোটাই খারাপ যে সামান্য বৃষ্টিতেই কুপোকাত ধানমন্ডি-২৭। আর অতি বৃষ্টি হলে ২৭-নম্বর যেন ছোট খাটো একটা নদীতে পরিণত হয়।'

তিনি বলেন, 'আসাদগেটের একটু আগেই জ্যামে আটকে ছিলাম আধাঘণ্টা। ভাবলাম কোন দুর্ঘটনা হয়েছে মনে হয়। দেরী হওয়ার ভয়ে তড়িঘড়ি করে বাস থেকে নেমে দেখি ২৭ নম্বরে হাঁটু পানি। এদিকে এই জলাবদ্ধতার সুযোগে পানি পারাপারের জন্য রিকশাওয়ালারা নতুন সার্ভিস শুরু করেছেন। পানি পার করিয়ে দিয়ে নিচ্ছেন ৫ টাকা।'

সামান্য বৃষ্টিতেই ধানমন্ডি-২৭ নম্বরের বেহালদশা। শুক্রবার বিকাল ৫ টায় তোলা ছবি...

ধানমন্ডি বয়েজস্কুল সংলগ্ন ফুটপাত অবধি উঠে গেছে পানি। ফুটপাতের সংযোগস্থলগুলোতে পানি থাকায় বিপদে পরছেন পায়ে হেঁটে চলাচলকারীরা। আর ১০ ফুট দূরত্বের সামান্য পানিটুকু জনপ্রতি ৫ টাকায় পার করে দিতে ভিজ জমিয়েছে রিকশাওয়ালারা। রিকশাওয়ালারা টার্গেট করছেন মূলত জুতাপড়া শ্যুটেট-বুটেট মানুষদের। যারা জুতা, ভেজা বা ময়লা পানি গায়ে লাগার ভয়ে রিকশায় উঠছেন। ওভারব্রিজের আগে-পরে এমন দুটি স্পটে রিকশা চালকরা ভিড় জমিয়েছেন।

রংপুরের রিকশা চালক ফজলু মিয়া বলেন, 'কম পানি হইলে ৫ টাকায় নেই। আর বেশি পানি হইলে আসাদ গেট থাকি ২৭ নাম্বার পর্যন্ত ৫০/১০০ টাকা নেই। কি করিমো বাফো, মাইষিরো উপকার হছে, হামারো টাকা কামাই হছে। খারাপ কুণ্ঠে।'

ধানমন্ডি-২৭ নম্বরের জলজট নিয়ে জনমানুষের অভিযোগের শেষ নেই। গত ২৭ জুলাই মিরপুর সড়কে ধানমন্ডি ২৭ নম্বর মোড়ে কোমর পানিতে নেমেছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন। তিনি বলেছিলেন, 'ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনের সিটি কর্পোরেশন যেভাবে কাজ করছে। ওয়াসাকে তেমন পাওয়া যায় না।'

২৭ নম্বরের জলাবদ্ধতার কারণ সম্পর্কে মেয়র বলেন, 'সোনারগাঁও হোটেলের কাছে হাতিরঝিলে ওয়াসার স্লুইচ গেইট বন্ধ থাকায় ধানমন্ডি ২৭ নম্বর এলাকায় বেশি জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। ওটা যদি সঠিকভাবে চালু রাখলে সমস্যা বেশি হবে না।' মেয়রের এমন বক্তব্যের পরও সমাধান পায়নি ধানমন্ডিবাসী। দিন যায় দিন আসে নগরবাসীর সমস্যার যেন শেষ নেই।