হাইকোর্ট: ঢাবির ভিসি নির্বাচনের প্যানেল অবৈধ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) নির্বাচনের জন্য মনোনীত তিন সদস্যের প্যানেল কে অবৈধ ঘোষণা করেছে হাইকোর্ট। একই সাথে সিনেটের যে বিশেষ সভা ডেকে ওই তিন সদস্যকে মনোনীত করা হয়েছিল সেই সভাকেও অবৈধ ঘোষণা করেছে হাইকোর্ট।

মঙ্গলবার, ১০ অক্টোবর হাইকোর্টের বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। আদালতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী আশিকুল হক। রিট আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান।

গত ২৯ জুলাইয়ের সিনেটের বিশেষ সভা এবং সভায় মনোনীত তিন সদস্যের প্যানেল উভয়কে অবৈধ ঘোষণা করেছে আদালত। একইসাথে আগামী ছয় মাসের মধ্যে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ঢাবির সিনেট গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

গত ১৬ জুলাই সিনেট সভা আহ্বানের বিষয়ে ঢাবির রেজিস্ট্রার একটি চিঠি দেন। চিঠিতে বলা হয়েছিলো, 'ঢাবি অধ্যাদেশের ১৯৭৩ আর ২১(২) ধারার অর্পিত ক্ষমতাবলে ভিসি প্যানেল মনোনয়নের জন্য উপাচার্য ২৯ জুলাই বিকেল ৪টায় সিনেটের বিশেষ সভা আহ্বান করেছেন।'

১৬ জুলাই ঢাবি রেজিস্ট্রারের দেয়া এই চিঠির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ জন শিক্ষকসহ ১৫ জন রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট আদালতে রিট দায়ের করেন। রিটে তারা বলেন, রেজিস্ট্রার্ড গ্র্যাজুয়েটের অনেক প্রতিনিধির পদ খালি রেখেই সিনেট সভা ডেকে উপাচার্য-প্যানেল নির্বাচন করা হচ্ছে। সিনেটের প্রতিনিধি হিসেবে রেজিস্ট্রার্ড গ্র্যাজুয়েটদের পদ পূরণ না করে উপাচার্য-প্যানেল নির্বাচন করা সঠিক নয়।

২৪ জুলাই ওই রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট বেঞ্চ ২৯ জুলাই ডাকা সিনেট সভার ওপর স্থগিতাদেশ দেন এবং রুল জারি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আদেশ ১৯৭৩ সালের ২০(১) ধারা অনুযায়ী সিনেট গঠন না করে ২৯ জুলাই ডাকা সভাটি কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত হবে না তা জানতে চাওয়া হয়। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে ২৬ জুলাই হাইকোর্টের ওই রায়ের উপর ৩০ জুলাই পর্যন্ত স্থগিতাদেশ দেয় আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।

ছাত্র-শিক্ষকদের আপত্তি সত্ত্বেও আপিল বিভাগের স্থগিতাদেশের সুবাদে কোনো প্রকার আইনি বাধা ছাড়াই ২৯ জুলাই সিনেটের বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক কামাল উদ্দিন এবং বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও নীল দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক আবদুল আজিজকে ভিসি-প্যানেলের সদস্য মনোনীত করা হয়।

৩০ জুলাই আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে রিট আবেদনকারীদের পক্ষ থেকে ০৩ আগস্ট পর্যন্ত সময় নেয়। ০৩ আগস্ট আবেদনটি ফের শুনানিতে ওঠে। ওইদিন আপিল বিভাগ তিন সদস্যের ভিসি-প্যানেলের পরবর্তী কার্যক্রমের উপর স্থগিতাদেশ প্রদান করে এবং ২৯ জুলাইয়ের সিনেটের বিশেষ সভা নিয়ে হাইকোর্টের জারি করা রুল চার সপ্তাহের মধ্যে নিষ্পত্তি করার আদেশ দেয়। সে অনুযায়ী ২১ আগস্ট থেকে এ রুল শুনানি শুরু হয়ে গত ৮ অক্টোবর রুলের চূড়ান্ত শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। ওই দিন আদালত ১০ অক্টোবর এ রিটের রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য করেন।

এদিকে উপাচার্য হিসেবে অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের মেয়াদ শেষ হওয়ায় ০৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামানকে সাময়িকভাবে উপাচার্যের দায়িত্ব প্রদান করেছে। তবে রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর যে কোন সময় তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহিত দিতে পারবেন।