প্রতি ৪০ সেকেন্ডে আত্মহত্যা করছেন একজন

দিন দিন বাড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতা। বিদেশে আত্মহত্যার হার অনেক বেশি হলেও বাংলাদেশে আত্মহত্যার হার বেশ কমই ছিল। তবে ইদানিং সে হার হু হু করে  বেড়েই চলছে। দেশের কোন কোন জেলায় এখন খুন কিংবা হত্যার তুলনায় আত্মহত্যার সংখ্যা বেশি। ফলে সমাজে মানুষের মধ্যে ক্রমেই হতাশা আর নিজেকে শেষ করে দেয়ার মত চরম সিদ্ধান্ত নেয়ার ঘটনা বড়ছেই। সমস্যা এখন এতটাই প্রকট যে বাদ যাচ্ছে না শিশু থেকে ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধাও।

২০১৪ সালে রাজধানীর উত্তরায় এক সাংবাদিক দম্পতির ১৮ বছরেরও কম বয়সী দুই সন্তান এক সাথে আত্মহত্যা করেছিল। যা সারা দেশে ব্যাপক আলোচিত হয়েছিল। বৃদ্ধদের আত্মহত্যা করার ঘটনাও কম নয়। গত ২৫ সেপ্টেম্বরও শেরপুরে এক বৃদ্ধা পুকুরে ঝাপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।

বিভিন্ন গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, বাংলাদেশে আত্মহত্যার হার প্রতি লাখে প্রতি বছরে ৩৯। খোদ রাজধানীতে প্রতিদিন দুই থেকে তিন জন আত্মহত্যা করছেন। দেশের চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া এবং ঝিনাইদহ জেলায় এই হার সবচেয়ে বেশি। ২০১০ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত এ ছয় বছরে ঝিনাইদহ জেলায় ১ হাজার ৯৪৪ জন আত্মহত্যা করেছেন। 

আত্মহত্যা নিয়ে এক প্রতিবেদনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) দাবি করা হয়েছে, প্রতি বছর বিশ্বে ১০ লাখ মানুষ আত্মহত্যা করে। সংস্থাটির অন্য এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন মানুষ আত্মহত্যা করছে। আর প্রতিদিন বিশ্বে তিন হাজার মানুষ আত্মহত্যা করে থাকে। আত্মহত্যাকারীদের বড় অংশের বয়স ১৫ থেকে ২৯ বছর। আর ১৫-৪৪ বছর বয়সী জনগোষ্ঠীর মৃত্যুর প্রধান তিনটি কারণের একটি হলো আত্মহত্যা। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) হিসাবে, ডিএসএবিলিটি অ্যাডজাস্টেড লাইফ ইয়ার অনুযায়ী পৃথিবীতে সবচেয়ে কর্ম অক্ষম করা রোগের মধ্যে বর্তমানে বিষন্নতার অবস্থান তৃতীয়। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এটির অবস্থান হবে দ্বিতীয়। বেশিরভাগ আত্মহত্যাই ঘটেবিষন্নতার কারণে। বাংলাদেশেওবিষন্নতার রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। কয়েক বছর আগের গবেষণায় এ রোগের হার ছিল ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। বর্তমান গবেষণায় এটি প্রায় ১২ শতাংশ। উপমহাদেশে প্রায় ৬৫ লাখ মানুষ আত্মহত্যার ঝুঁকিতে রয়েছেন। ডব্লিউএইচও আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, ২০২০ সাল নাগাদ প্রতি বছর সাড়ে ১৫ লাখ মানুষ আত্মঘাতী হবেন। আত্মহত্যার চেষ্টা চালাবেন এরও ১০ থেকে ২০ গুণ মানুষ। 

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, আত্মহত্যা প্রবণতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে দশম। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও পুলিশ সদর দপ্তরের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, দেশে প্রতিদিন গড়ে ২৮ জন আত্মহত্যা করেন। সে হিসাবে প্রতি বছর দেশে ১০ হাজারের বেশি মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন। ২০১৬ সালের গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে গত সাত বছরে ৭৩ হাজার ৩৮৯ জন আত্মহত্যা করেছেন। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ও বাংলাদেশ পুলিশ সদর দফতর অনুযায়ী, আত্মহত্যাকারীদের বেশিরভাগেরই বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। 

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও পুলিশ সদর দফতরের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে ২০১৪ সালে ১১ হাজার ৯৪ জন, ২০১৩ সালে ১০ হাজার ১২৯ জন, ২০১২ সলে ১০ হাজার ১৬৭ জন, ২০১১ সালে ১০ হাজার ৩২৩ জন এবং ২০১০ সালে ১০ হাজার ৭৮৮ জন আত্মহত্যা করেছেন। শুধু গত পাঁচ বছরে (২০০৯-২০১৪) ফাঁসিতে ঝুলে ও বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছেন ৫০ হাজার ৬৬০ জন। তবে চিকিৎসকদের মতে, আসল সংখ্যা এর চেয়ে বেশি। সরকারি হাসপাতালে আত্মহত্যা চেষ্টার কেস লিপিবদ্ধ করা হলেও ক্লিনিকে এসব কেস ধামাচাপা দেয়া হয়।

এ বিষয়ে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের সহকারী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ  বলেন, 'আত্মহত্যার অন্যতম কারণ বিষন্নতা। সঠিক সময়ে বিষন্নতা নির্ণয় ও চিকিৎসা করা গেলে আত্মহত্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট ও সব সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেআত্মহত্যাসহ সব ধরনের মানসিক রোগের চিকিৎসা আছে।'