প্রধান বিচারপতি ইস্যুতে ধুম্রজাল, যা বললেন আইনমন্ত্রী

প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার ছুটিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মহলের নাটকীয়তা চলছেই। বিশ্বাসযোগ্য সত্য কোনটি, তা নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। একদিকে এস কে সিনহা বিদেশ গমনের আগে গণমাধ্যমের কাছে নিজেকে সুস্থ দাবি করছেন, অন্যদিকে রাষ্ট্রপতির কাছে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে নিয়েছেন একমাসের ছুটি। আবার অন্যদিকে আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের সত্যতা নিয়ে সমালোচনা চলছেই।

ছুটি নিয়ে প্রধান বিচারপতি বিদেশে যাওয়ার পর আপিল বিভাগের পাঁচজন বিচারপতি তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ১১টি অভিযোগ তুলেছেন। তারা সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, অভিযোগের সুুরাহা না হওয়া পর্যন্ত প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আর এক বেঞ্চে বসবেন না। তাই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে একক বেঞ্চের নিয়ম না থাকায় প্রধান বিচারপতি দেশে ফিরে কি করে এজলাসে বসবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

শনিবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, বিদেশে অর্থপাচার, নৈতিকস্খলনসহ ১১টি অভিযোগ তুলে বিবৃতি দিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্ট। রোববার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের বিবৃতি নিয়ে আমার কিছু বলার ক্ষমতা নেই। আমি শুধু ওয়েবসাইটে দেওয়া বক্তব্যই পড়েছি। এখানে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে আনা ১১ অভিযোগের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত আপিল বিভাগের পাঁচজন বিচারপতি তার সঙ্গে একই বেঞ্চে বসে বিচারকার্য পরিচালনা করবেন না। তাহলে প্রধান বিচারপতি দেশে ফিরে কিভাবে এজলাসে বসবেন?’

অভিযোগের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট বিবৃতি দিতে পারেন কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট নিয়ে বা কোন প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে যদি কোন ধরণের বিতর্কের সৃষ্টি হয়, তবে আইনি বলে ও প্রিন্সিপাল অব ন্যাচারাল জাস্টিসের বলে সে প্রতিষ্ঠান তার জবাব দিতে পারেন। সুপ্রিম কোর্ট যদি সেক্ষেত্রে দিয়ে থাকেন, তবে সেটা বিবৃতি আকারেই দেবেন।’

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পর মামলা-মোকদ্দমার আগে প্রক্রিয়া আছে। প্রথমে এর অনুসন্ধান হবে। অনুসন্ধানে যদি এর সত্যতা পাওয়া যায়, তাহলে নিশ্চয়ই তার পরবর্তী পদক্ষেপগুলো নেওয়া হবে।’

তিনি বলেন ‘প্রধান বিচারপতির পদটি একটি প্রতিষ্ঠান। যিনি এ আসন অলংকৃত করেন, তার বিষয়ে যদি কোন অভিযোগ ওঠে বা তার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হয়, তাহলে সম্পূর্ণ আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। খামখেয়ালিভাবে বা তাড়াহুড়া করে একজন প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াটা কোনভাবেই সমীচীন নয়।’

শুক্রবার রাতে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হন বিচারপতি সিনহা। সরকারি বাসভবন ছাড়ার আগে তিনি সাংবাদিকদের কাছে লিখিত বিবৃতিতে জানিয়ে গেছেন ‘আমি সম্পূর্ণ সুস্থ, পালিয়ে যাচ্ছি না, ফিরে আসবো।’

এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি এখনও বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি আছেন। তিনি ছুটি চেয়েছেন, বিদেশে গেছেন এবং নিজের মুখে বলেছেন, আগামী ১০ নভেম্বরের মধ্যে দেশে ফিরে আসবেন।’

প্রধান বিচারপতির এই বক্তব্যে সরকার বিব্রত কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার বিব্রত নয় তবে হতে পারে প্রধান বিচারপতি বিব্রত। নয়তো তিনি পালিয়ে যাচ্ছেন কিনা এ ধরণের কোন প্রশ্ন ওঠার আগেই নিজে থেকে কেন তার উত্তর দিয়ে গেলেন?’