সংলাপে ইসিকে কি প্রস্তাবনা দিল বিএনপি?

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ করতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে বহু কাঙ্ক্ষিত সংলাপে অংশ নিয়েছে বিএনপি। সংলাপে নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডসহ মোট ২০টি প্রস্তাবনা দেয় দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি।

রোববার বেলা ১১টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভবনে এ সংলাপ শুরু হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টার সংলাপ শেষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, 'খোলামেলা পরিবেশে আলোচনা হয়েছে। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সংলাপ নিয়ে আশাবাদী না হলেও কিছুটা আশা রাখতে চাই।

মির্জা ফখরুল বলেন, 'বিএনপি ইসিকে বলেছে- 'এসব সংলাপ যেন শুধুমাত্র লোক দেখানো না হয়। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, তারা সীমার মধ্যে প্রয়োজনীয় সব কিছুই করবে।' ফখরুল বলেন, 'আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব দল ও প্রার্থীর সমান সুযোগ তৈরি (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) নিশ্চিত করতে বিএনপির পক্ষ থেকে ২০ টি প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে।

বিএনপির প্রস্তাবনাগুলো হলো-

নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের অধীনেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমান সংসদ ভেঙে দিয়ে ১/১১ সরকার কর্তৃক বিএনপি চেয়ারপারসনসহ সব নেতার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের যেসব মামলা হয়েছে তার সবগুলো প্রত্যাহার করতে হবে। দেশব্যাপী গ্রেপ্তারকৃত সকল নেতাকর্মীকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের গুম, খুন, হয়রানি ও নানাভাবে ভীতি দেখানো বন্ধ করতে হবে।

বিরোধী রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশসহ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা নিশ্চিত করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের কার্যকর সংলাপের উদ্যোগ নির্বাচন কমিশনকেই নিতে হবে। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের ক্ষেত্রে ইভিএম / ডিভিএম ব্যবহার করা যাবে না।

প্রতিরক্ষা বাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা প্রদান করতে হবে। নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগেই তাদের কেন্দ্রের দায়িত্ব দিতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এবং আইন-কানুন বিধি-বিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধন করতে হবে।

২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে সংসদীয় আসনগুলোর ক্ষেত্রে যে সীমানা ছিল সেটা পুনর্বহাল রাখতে হবে। ব্যতিক্রম করতে হলে রাজনৈতিক দল বা জোটের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে করতে হবে। নির্বাচনকালীন প্রশাসনকে অবশ্যই শতভাগ দলীয় প্রভাবমুক্ত এবং চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করতে হবে।

নির্বাচনের ছয় মাস আগেই সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটি বাতিল করে স্থানীয় প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে দিতে হবে। দেশের প্রত্যেকটি ভোটকেন্দ্রে প্রয়োজনীয়সংখ্যক সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে। নির্বাচনের দিন সারাদেশে মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক চালু রাখতে হবে।

গণমাধ্যমগুলোর স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা বাতিল করতে হবে। নির্বাচনে কালো টাকা ও পেশীশক্তির ব্যবহার বন্ধ করে প্রয়োজনীয় কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।

বিদেশি পর্যবেক্ষকদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণে উৎসাহী করতে হবে। তাদের আগমন সহজীকরণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। দেশীয় পর্যবেক্ষক ও পর্যবেক্ষণ সংস্থার মনোনয়ন ও নিবন্ধনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।

আজকের সংলাপে বিএনপি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার সঙ্গে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য, উপদেষ্টা ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবসহ মোট ২০ সদস্য অংশ নেন। অন্যদিকে সিইসি পক্ষে নেতৃত্ব দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদা। বৈঠকে অপর চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিবালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।