কখন যে বোলিং এমন নির্বিষ হয়ে গেছে!

নির্বিষ বোলিং কাকে বলে— এমন প্রশ্ন করলে এবারের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশি বোলাররা যা করেছেন, তা সামনে তুলে ধরলেই হবে। অথচ এক সময় বোলিংই ছিলো বাংলাদেশ দলের প্রধানতম শক্তি। সেই শক্তি কখন যে নির্বিষ হয়ে দুর্বলতায় পরিণত হলো, তা যেনো কেউ টেরই পায়নি। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে দুর্বলতাটা আর লুকানো গেলো না।

কিন্তু কেনো এমন হলো? মোস্তাফিজ বাংলাদেশ ক্রিকেটে আবির্ভূত হয়েছিলেন এক ঝলক আলো নিয়ে। সেই মোস্তাফিজ কেনো বছর ঘুরতে না ঘুরতেই পরিণত হলেন নিজের ছায়ায়। প্রায় ১০ বছর ধরে জাতীয় দলে খেলা রুবেল হোসেনও করতে পারছেন না কিছুই। তাসকিন আহমেদও গতি ছাড়া অন্য কিছু দেখাতে ব্যর্থ। সব মিলিয়ে বোলিং বিভাগ যেনো হয়ে গেছে মস্তিষ্কশূন্য এক বোঝা।

বোলিংয়ের এমন কঙ্কালসার রূপ নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন জাতীয় দলের সাবেক দুই অধিনায়ক এবং বর্তমান দলের ম্যানেজমেন্টের অংশ মিনহাজুল আবেদীন নান্নু ও খালেদ মাহমুদ সুজন। তারা বলছেন যে, বোলারদের নিবেদনেই আছে সমস্যা। যে কারণে সফলতার নিক্তিতে ব্যাটসম্যানদের তুলনায় বেশ পিছিয়ে আছেন তারা।

এ প্রসঙ্গে মিনহাজুল সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘বোলারদের মূল সমস্যা হলো, তারা অনুশীলন কম করে। সে জন্য ওরা জানে না যে বল ঠিক কোথায় ফেলতে হবে। ম্যাচ অনুশীলনের জন্য অনেক বেশি ম্যাচ খেলার কোনো বিকল্প নেই।’

অনেক বেশি ম্যাচ খেলার কথা বলে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট কম খেলার ঘাটতির কথাও তুলে ধরেন মিনহাজুল। কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রায় মৃত উইকেটে যারা প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলে বেড়ে উঠছেন, তারা আসলে কতোটা আন্তর্জাতিক মানের হয়ে উঠছেন, তা নিয়ে তেমন কোনো কথাই বলেননি তিনি। বোলারদের কম অনুশীলনের দিকে ইঙ্গিত করেই নিজের দায়িত্ব সেরেছেন।

মিনহাজুলের কথা প্রতিধ্বনিত হয়েছে খালেদ মাহমুদ সুজনের কণ্ঠেও। তিনি বোলারদের অনুশীলনের অনীহার কথা তুলে ধরে উদাহরণ হিসেবে মুশফিক ও তামিমের কথাও বলেন। সুজন বলেন, ‘মুশফিক ও তামিম মূল অনুশীলনের পরও এক-দুই ঘণ্টা নেটে ব্যাটিং করে যায়। আর বোলাররা চার বা পাঁচ বোলার বোলিং করেই অনুশীলন শেষ করে। এভাবে কিন্তু হয় না। অন্য দলের বোলাররা কিন্তু বাড়তি অনুশীলন করে।’

দলে এতো কোচিং স্টাফ, বোলারদের জন্য আলাদা কোচ থাকার পরও বোলাররা কেন কম অনুশীলন করেন, সে বিষয়ে কিছু বলেননি মিনহাজুল বা সুজন। তার মানে কি বোলাররা কতক্ষণ অনুশীলন করবেন, নেটে কয় ওভার বোলিং করবেন, সে সিদ্ধান্ত বোলাররাই নেন? তাহলে এতো কোচ, এতো আয়োজনের কী দরকার!

বোলিং লাইনের এমন নির্বিষ হয়ে উঠার পিছনে যদি বোলাররা দায়ী হন, তাহলে তার চেয়ে বেশি দায়ী টিম ম্যানেজমেন্ট। কারণ তারা বোলারদের অনুশীলনের একটা মানই এখন নির্ধারণ করে দিতে পারেননি। এই ব্যাপারটা তো দক্ষিণ আফ্রিকায় বোলারদের লজ্জার পারফর্ম্যান্সের চেয়ে বেশি লজ্জাকর ব্যাপার!