যে কারণে মৃত্যুদণ্ড থেকে যাবজ্জীবন ঐশীর...

পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও স্ত্রী স্বপ্না রহমান হত্যা মামলায় মেয়ে ঐশী রহমানের মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আজ রোববার নতুন করে এই মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন স্বাক্ষর করার পর ৭৮ পৃষ্ঠার রায় প্রকাশ করা হয়েছে।

রায়ে হাইকোর্ট জানান, ঐশী যে অপরাধ করেছেন তা মৃত্যুদণ্ডের যোগ্য হলেও তার বয়স ও মানসিক স্বাস্থ্য বিবেচনা করে সাজা কমানো হয়েছে। মূলত পাঁচটি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে ঐশীর সাজা কমানো হয়েছে বলে রায়ে জানা গেছে।

প্রথমত: ঐশী হত্যাকাণ্ডের সময় মাদকাসক্ত ছিলেন এবং তিনি ১৪ বছর বয়স থেকেই ইয়াবা, গাঁজা, ফেনসিডিলের মতো নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবনে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিলেন।

দ্বিতীয়ত: বংশগতভাবে ঐশী মানসিক রোগী। তার চাচা-দাদি-খালাসহ পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের মধ্যে প্রবল মানসিক রোগের লক্ষণ রয়েছে যা ছোটবেলা থেকে ঐশীর মধ্যেও বিদ্যমান।

তৃতীয়ত: নিজের বাবা-মাকে হত্যা করার দ্বিতীয় দিনের মাথায় ঐশী আত্মসমর্পণ করেছেন যা থেকে বোঝা যায়, তিনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।

চতুর্থত: হত্যাকাণ্ডের সময় ঐশীর বয়স ১৯ বছর ছিল। সদ্য বয়ো:সন্ধি অতিক্রম করে যাওয়া বয়সের একটি সন্তানকে তাঁর বাবা-মা যথাযথভাবে লালন পালন করতে পারেননি। ফলে ছোটবেলা থেকেই ঐশী বেপরোয়া হয়ে বেড়ে উঠেছিলেন।

পঞ্চমত: হত্যাকাণ্ড ঘটানোর সময় ঐশীর বয়স ছিল ১৯ বছর। সে সময় তিনি মাত্র সাবালকত্ব পাওয়ার বয়সে ছিলেন এবং তার বিরুদ্ধে অতীত কোন ফৌজদারি মামলা নেই।

রায়ে আদালত বলেন, ঐশীর বাবা পুলিশে ও মা ডেসটিনি গ্রুপে চাকরি করতেন। এই দম্পতি জীবন-জীবিকা নিয়ে এতো বেশি ব্যস্ত ছিলেন যে ঐশীকে পর্যাপ্ত সময় দিতে পারেননি। কিন্তু তারা যখন এই বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন, তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। ততোদিনে সম্পূর্ণ মাদকাসক্তে পরিণত হয়েছিলেন ঐশী।

আদালতের পক্ষ থেকে রায়ে বলা হয়, ‘আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে মৃত্যুদণ্ডকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমানোর জন্য গাইডলাইন নেই। আমাদের দেশে শিক্ষার হার বেড়েছে এবং এখন আমরা স্বীকার করি যে, মৃত্যুদণ্ডই একমাত্র দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নয়। এটা কার্যকর করলেই যে সমাজ থেকে অপরাধ দূর হয়ে যাবে তা নয়। কম সাজাও অনেক সময় সমাজ থেকে অপরাধ কমাতে সুস্পষ্টভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

রায়ে বলা হয়, মা-বাবাই হলেন সন্তানদের প্রাথমিক শিক্ষক। সন্তানের জন্য একটি ভালো ও সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করা ও সন্তানকে সঙ্গ দেওয়া প্রতিটি বাবা-মায়েরই কর্তব্য। ঐশীর মতো সন্তানদের বিপথে যাওয়া থেকে দমানো যেতে পারে দৃঢ় পারিবারিক বন্ধন সৃষ্টির মাধ্যমে।

গত ১০ এপ্রিল বিচারকের খাস কামরায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ঐশী রহমানের বক্তব্য শোনেন দুই বিচারপতি। কারাগার থেকে হাইকোর্টে হাজির করিয়ে ঐশীর বক্তব্য শোনা হয়। এসময় আদালতে ঐশীর পক্ষে আইনজীবী অ্যাডভোকেট আফজাল এইচ খান ও সুজিত চ্যাটার্জী এবং রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবি ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জহিরুল হক জহির ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আতিকুল ইসলাম সেলিম উপস্থিত ছিলেন।