পাওয়া যায়নি সাংবাদিক উৎপলকে, খবরটি 'ভুয়া'

প্রায় বিশ দিন ধরে নিখোঁজ থাকা বাংলাদেশি একটি অনলাইন পোর্টালের সিনিয়র রিপোর্টার সাংবাদিক উৎপল দাসকে পাওয়া গেছে বলে যে খবরটি প্রচার হয়েছে সেটির সত্যতা পাওয়া যায়নি। একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল এবং তার কর্মস্থল পূর্বপশ্চিমবিডি ডট নিউজ মতিঝিল থানা-পুলিশের বরাত দিয়ে বলা হয়, উৎপল টাঙ্গাইলের মির্জাপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। পরবর্তীতে পূর্বপশ্চিমবিডি তাদের সংবাদটি সরিয়ে ফেলে।

সাংবাদিক উৎপল দাস

সন্ধ্যায় উৎপলের অনলাইন পোর্টালের সম্পাদক খুজিস্তা নূর-ই-নাহরিন বলেন, 'মতিঝিল থানা থেকে খবর পেয়েছি টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের হাসপাতালে উৎপল চিকিৎসাধীন। তার পরিবারকে জানানো হয়েছে। উৎপলের ছোট বোন বিনীতা রাণী দাস পুলিশকে উৎপলের সঙ্গে কথা হয়েছে বলেও জানান।”

উৎপলের বাবা চিত্তরঞ্জন দাস সন্ধ্যায় বলেন, 'আমি এখনো রাস্তায়। খবরটি শুনেই বাসা যাচ্ছি। উৎপলের ভাই জানান, 'আমরা জানতে পেরেছি উৎপলকে পাওয়া গেছে। তবে আমাদের সঙ্গে এখনো যোগাযোগ হয়নি।'

মতিঝিল অঞ্চলের উপকমিশনার আনোয়ার সন্ধ্যায় বলেন, 'আমরা মির্জাপুর থেকে খবর পেয়েছি এমন একজনকে পাওয়া গেছে। তার শারীরিক অবস্থা ভালো নয়, তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে পুলিশ কর্মকর্তাদের পাঠানো হচ্ছে, পাশাপাশি তার স্বজনরা তাকে শনাক্ত করবেন।'

কিছুক্ষণ পর উপ-কমিশনার আনোয়ার হোসেন আবার জানান, 'আমরা পাওয়া মেসেজটি সম্ভবত ফেইক (ভুয়া)। তাকে খুঁজে পাওয়া গেলে অবশ্যই জানানো হবে।'

মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান সন্ধ্যা ৭টার দিকে বলেন, 'আমরা এমন একটি খবর পেয়ে অনেক খোঁজাখুজি করছি। বেশকিছু হাসপাতালেও খোঁজ নেয়া হয়েছে। তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। এখানে বেশকিছু হাসপাতাল-ক্লিনিক আছে, সবগুলোতে খোঁজ নেয়া হচ্ছে।

গত ১০ অক্টোবর থেকে উৎপল দাস নিখোঁজ রয়েছেন। এ ঘটনায় রাজধানীর মতিঝিল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। উৎপল দাস অনলাইন নিউজ পোর্টাল পূর্বপশ্চিমবিডি.নিউজের সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন মানববন্ধন, মোমবাতি প্রজ্জ্বলনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন।

উৎপল দাসের সন্ধান দাবি করে সাংবাদিকদের মানববন্ধন ও মোমবাতি প্রজ্জ্বলন

সিনিয়র সাংবাদিক পুলক ঘটক ফেসবুক স্টাটাসে লিখেছেন, 'সাংবাদিক উৎপল দাস উদ্ধারের বিষয়ে পুলিশের কাছ থেকে দুই ধরণের তথ্য পাচ্ছি। টাঙাইলের মির্জপুর থানার সাব ইন্সপেক্টর রিপন আমাকে নিশ্চিত করেছেন যে উৎপলকে উদ্ধার করা গেছে। কিন্তু ওই থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আমাকে জানিয়েছেন, উদ্ধারের খবর সত্য নয়। তাকে উদ্ধার করা যায়নি। যে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কথা বলা হচ্ছে সেখানে আমরা খোঁজ নিয়েছি। সেখানেও উৎপল নেই। সঠিক তথ্য জানার জন্য যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি।'

এদিকে আরেক সিনিয়র সাংবাদিক সমকালের রাজিব নুর বলেছেন, 'উৎপলকে এখনও পাওয়া যায়নি। গুজবে বিভ্রান্ত হবেন না।'

পূর্বপশ্চিমের বার্তা সম্পাদক শাহনেওয়াজ সুমন জানান, ১০ অক্টোবর দুপুর ১টার দিকে পূর্বপশ্চিমের মতিঝিল অফিস থেকে বের হওয়ার পর থেকে তিনি নিখোঁজ রয়েছেন। অফিস থেকে বের হওয়ার পর তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে কল করে বন্ধ পাওয়া গেছে। উৎপল দাসের সন্ধান চেয়ে মতিঝিল থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। জিডি নং-১৬২৫, তাং-২২/১০/১৭ইং।

১০ অক্টোবর দুপুর ১টা ৪৪ মিনিটের দিকে উৎপল দাস তার নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট সর্বশেষ স্টাটাসে লিখেন, ‘বলছিলাম নতুন ইস্যুর কথা: গেপ্তার’। এরপর থেকে তাকে ফেসবুকে আর অনলাইনে দেখা যায়নি।

উৎপল দাস (২৯) নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার থানাহাটি এলাকার চিত্ত দাসের পুত্র। নটরডেম কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যায় থেকে অনার্স করেছেন। তিনি রাজধানীর ফকিরাপুল এক নম্বর গলিতে ভাড়া বাসায় থাকতেন। পূর্বপশ্চিমের আগে তিনি বন্ধ হয়ে যাওয়া অনলাইন পোর্টাল বাংলামেইলে কাজ করেছিলেন।