আশঙ্কাই সত্যি হলো, রচিত হলো ইতালির কলঙ্কের রাত

রাশিয়া বিশ্বকাপে জায়গা পেতে ঘরের মাঠে সুইডেনের বিপক্ষে ২-০ গোলের ব্যবধানে জিততো হতো ফুটবলের পরাশক্তি ইতালিকে। কিন্তু শত চেষ্টা করেও গোলের দেখা পেল না আজ্জুরিরা। ফলে শেষ পর্যন্ত ফুটবল বোদ্ধাদের আশঙ্কাই সত্যি হলো চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইতালিকে ছাড়াই হচ্ছে রাশিয়া বিশ্বকাপ।

ইতালির পারফরমেন্স ভাল ছিল না মোটেই। প্রথম লেগে ০-১ গোলের ব্যবধানে হেরে থাকা ইতালির জন্য আজকের ম্যাচটি ছিল বাঁচা মরার। সুইডেনের বিপক্ষে শুধু জিতলেই চলবে না হারাতে হবে ২ গোলের ব্যবধানে। দেয়ালে পিঠ ঠেকে দারুণ লড়াই করেছে ইতালি কিন্তু কিছুতেই ভাঙ্গতে পারেনি সুইডেনের রক্ষণভাগ। ঘরের মাঠে সুইডেনের কাছেই রচিত হলো ইতালির কলঙ্কের রাত। আর ইতালির ব্যর্থতায় রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে সুইডেন।

মিলানের সান সিরোয় সোমবার দিবাগত রাতে বাছাইপর্বের প্লে-অফের ফিরতি লেগের ম্যাচটি গোলশূন্য ড্র হয়েছে। ফলে ১৯৫৮ সালের পর প্রায় ৫ যুগ পর বিশ্বকাপে যেতে পারলো না ইতালি। অন্যদিকে ২০০৬ সালের পর ১ যুগ পর বিশ্বকাপের মূলপর্বে উঠলো সুইডেন।

সোমবার রাতের ম্যাচে ৭৬ শতাংশ সময় বল ছিল আজ্জুরিদের দখলে। সুইডেনের গোলপোষ্টে গুনে গুনে নেয়া হয় ২৭টি শট। ৬টি শট লক্ষ্যে আঘাত করলেও গোলের দেখা পায়নি নীল বিপ্লবের ইতালি। বলা হয়ে থাকে, ইতালির রক্ষণভাগই পৃথিবীর সবচাইতে বেশি দুর্ভেদ্য সেখানে উল্টো সুইডেনই যেন আজ হয়ে উঠলো বিশ্বসেরা। প্রতিপক্ষের ডি-বক্সে বারবার সুযাগ নষ্ট করেছেন চিরো ইম্মোবিলেও, আলেস্সান্দো ফ্লোরেন্সিরা।

দুই গোলের ব্যবধানে জয় পাওয়া অসম্ভব কিছু নয়, তবে কিছুটা কঠিন। গোল পেতে শুরু থেকেই সুইডেনকে চেপে ধরে ইতালি। আক্রমণাত্মক ফুটবলে দর্শকরাও হয়ে ওঠে মাতোয়ারা। ৪০তম মিনিটে ইতালি প্রথম উল্লেখযোগ্য আক্রমণ করে। চিরো ইম্মোবিলের জোরালো শট কোনমতে পা দিয়ে ঠেকিয়ে দেন সুইডেনের গোলরক্ষক। সুইডেনের গোলরক্ষক ওলসেনকে যেন কোনভাবেই পরাস্ত করা যাচ্ছিল না। ৮৩ মিনিটেও ফ্লোরেন্সির বাড়ানো বলে পারোলোর দারুণ হেড ঠেকিয়ে দেন ওলসেন।

দারুন খেলেও গোল পায়নি আজ্জুরিরা। সমর্থকরা নানাভাবে প্রেরণা দিলেও সুবিধা করতে পারেনি ইতালির রক্ষণভাগ। ম্যাচ শেষে পুরো গ্যালারিতে নেমে আসে শোকের ছায়া। দর্শক-খেলোয়াড়রা চোখের পানিতে কষ্ট লুকান। সেই কান্নার রোল হয়তো সীমানা পেরিয়ে কোটি কোটি ইতালি সমর্থকদের চোখেও দেখা গেছে।

২০০৬ জার্মান বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ইতালি। এরপর যেন অবনমন হতে থাকে ইতালির। ২০০৬ সালের পর গত দুই আসরে গ্রুপ পর্বই পেরুতে পারেনি ইতালি। আর এবার বাদ পড়লো বাছাইপর্ব থেকে।

বিশ্বকাপে খেলতে না পারার হতাশার সেই রেশ দেখা গেল ইতালির কিংবদন্তি গোলরক্ষক জানলুইজি বুফনের কণ্ঠেও। তিনি দু:খ প্রকাশ করলেন ইতালির ফুটবলের জন্য। তিনি বললেন, 'আমার জন্য নয়, দেশের ফুটবলের জন্য খারাপ লাগছে। এভাবে শেষ করাটা অনেক কষ্ট আর আফসোসের।'