আপনি পড়ছেন

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলছে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক পর্যায়ে ভর্তি পরীক্ষা। ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে শিক্ষার্থীরা ছুটে বেড়াচ্ছেন দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত। কখনও কখনও অভিভাবকরাও ছুটছেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। স্বল্প সময়ের মধ্যে এত ভ্রমণ, যাত্রাপথে যানজট, থাকা-খাওয়ার কষ্টসহ হাজারও প্রতিকূলতায় জর্জরিত উচ্চশিক্ষা গ্রহণের রাস্তা। ভর্তি পরীক্ষা দিতে গিয়ে শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা হয়রান। শিক্ষার্থীদের নানা ভোগান্তি নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদনের আজ থাকছে ১ম পর্ব। লিখেছেন- যাকারিয়া ইবনে ইউসুফ

hons admission test

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির ব্যাপারে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার বিষয়টি দীর্ঘদিন থেকেই আলোচনায়। সর্বশেষ ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তখন ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদন রাষ্ট্রপতির কাছে হস্তান্তরের সময়ও তিনি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছে সমন্বিত ভর্তি পদ্ধতির খোঁজ নেন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ভিসিকে নিয়ে রাষ্ট্রপতির দপ্তরে একাধিক বৈঠক আয়োজনের কথাও তিনি বলেন। পরে রাষ্ট্রপতির দপ্তর থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়। কিন্তু এরপর বিষয়টির তেমন অগ্রগতি নেই।

ভর্তিযুদ্ধে অংশ নিচ্ছে লাখ লাখ শিক্ষার্থী: বিভিন্ন বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৭ সালে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করেছে আট লাখ এক হাজার ৭১১ জন। শিক্ষার্থীদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৭ হাজার ৯৬৯ জন। জিপিএ-৪ থেকে ৫-এর নিচে পেয়েছে দুই লাখ ১৬ হাজার ২৮৭ জন। এর বাইরে জিপিএ-৩ থেকে ৪ পেয়েছে আরও কয়েক লাখ। এরা সবাই ভালো কোথাও ভর্তির জন্য ছোটাছুটি করছে। অর্থাৎ কমপক্ষে পাঁচ লাখ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিযুদ্ধে অংশ নিচ্ছে। অথচ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আসন সংখ্যা অত্যন্ত সীমিত।

বর্তমানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে ৪২টি, তার মধ্যে শিক্ষাকার্যক্রম চালু আছে ৩৭টির। জাতীয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় বাদ দিলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন আছে ৫০ হাজারের মতো। এইচএসসি পাস করা তিন পয়েন্টের ওপরে পাওয়া সব শিক্ষার্থীর বেশিরভাগই প্রথম টার্গেট ভালো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। যারা ভালো রেজাল্ট করেছে তাদের টার্গেট সরকারি মেডিকেল কলেজ, ডেন্টাল কলেজ, টেক্সটাইল কলেজ ও মেরিন একাডেমি। এসব প্রতিষ্ঠানের আসন সংখ্যাও সীমিত।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আসন সংখ্যা ৩৬ হাজার ৩৪৩। সরকারি মেডিকেল কলেজে সর্বসাকুল্যে প্রথমবর্ষে আসন সংখ্যা তিন হাজার ২১২টি, বেসরকারি ৬৪টি মেডিকেল কলেজে আসন প্রায় ছয় হাজার। সরকারি ৯টি ডেন্টাল কলেজে আসন ৫৬৭টি, বেসরকারি ১৪টি ডেন্টাল কলেজে আসন সংখ্যা ৮৯০। সরকারি ছয়টি টেক্সটাইল কলেজে আসন ৪৮০টি, সরকারি একটি মেরিন একাডেমিতে আসন ৩০০টি, বেসরকারি ১৭টি মেরিন একাডেমিতে আসন এক হাজার ৩৬০টি। এছাড়া দু’টি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৫০ শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারবেন। ৯৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সেমিস্টারে ভর্তি হতে পারবেন এক লাখ ৮৯ হাজার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোতে আসন সংখ্যা তিন লাখ ৯৮ হাজার ৯৩০ এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন আছে ৭৭৭টি।

পরিসংখ্যান দেখেই বোঝা যাচ্ছে, উচ্চমাধ্যমিক পাস করা আট লাখ শিক্ষার্থীর সবাই উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে না। যারা সুযোগ পাচ্ছে না তারা আবার পরের বছর ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। এ সংখ্যাটাও লাখ ছাড়িয়ে যাবে। ফলে প্রতি বছর প্রতিযোগিতা বাড়ছে।

মেয়ে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির শেষ নেই: বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়া ভর্তিচ্ছুদের বিশেষ করে মেয়ে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির যেন শেষ নেই। নিরাপত্তা আবাসনসহ নারা কারণে অভিভাবকরা তাদের আদরের মেয়েকে ভর্তি পরীক্ষার সময়টাতে একা একা কোথাও যাতায়াত করতে দেন না। ফলে শিক্ষার্থীর সঙ্গে তার বাবা, ভাই, মা অথবা বড় বোনকে যেতে হয়।

ঢাকার একটি কলেজের শিক্ষার্থী খাদিজা বিন ইউসুফ, বাড়ি পঞ্চগড়। এইচএসসি রেজাল্ট কিছুটা খারাপ হওয়ায় তাকে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হচ্ছে প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার এ ভর্তিযুদ্ধে তাকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরছেন তার বড় ভাই সংগ্রাম।

সংগ্রাম বলেন, 'বোন রাজশাহী, চট্টগ্রাম, সিলেট, রংপুর, ময়মনসিংহ ও কুমিল্লায় ভর্তি পরীক্ষা দিচ্ছে। সব জায়গায়তো আমাদের পরিচিত কেউ নেই। তাই তাকে একা একা কোথাও পাঠাতে পারছি না। তাকে সব জায়গায় নিয়ে যাওয়া, থাকা-খাওয়াসহ সবমিলিয়ে আমাদের ভোগান্তির শেষ নেই। এখন ভালোমতো কোথাও ভর্তি হতে পারলেই হয়। দু’জনের থাকা-খাওয়াসহ খরচ প্রায় ৭০- থেকে আশি হাজার টাকার মতো। পাশাপাশি আবাসন সমস্যা, যানজট, বাথরুমসহ নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় পরীক্ষার্থী-অভিভাবকদের।'

hons admission test 2

২৭ অক্টোবর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়ে সম্পার জন্য বাইরে অপেক্ষা করছেন শাকিলা জাহান। তিনি বলেন, 'মেয়েকে নিয়ে দৌড়াদৌড়ির শেষ নেই। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা শেষ করেই মেয়েকে নিয়ে এসেছি চট্টগ্রামে। বাড়িতে স্বামীসহ সন্তানদের রেখে মেয়েকে নিয়ে ছোটাছুটি করতে হচ্ছে। যাতায়াত আর ঘুমের অসুবিধার কারণে আমি নিজেও খানিকটা অসুস্থ হয়ে পড়েছি। মেয়েটার অবস্থাও ভালো নয়। সকালে বাস থেকে নেমেই পরীক্ষা দিতে ঢুকেছে। এখানে দুরসম্পর্কের একজন আত্মীয় আছেন; কিন্তু তাদের বাসা অনেক দূরে, পরীক্ষা শেষ করে হয়তো যেতে হবে। মা-মেয়ের গোসলসহ বাথরুম নিয়ে এ যাত্রাপথে ভালো ভোগান্তি হচ্ছে। টুম্পা এবং তার মায়ের মতো অধিকাংশ শিক্ষার্থীর ভোগান্তিটা এরকমই।'

ভর্তি পরীক্ষা দিতেই খরচ অর্ধ লক্ষাধিক: ভর্তিচ্ছু প্রতি শিক্ষার্থীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু পরীক্ষায় অংশ নিতেই খরচ হচ্ছে অর্ধ লক্ষাধিক টাকা। রাজধানী ঢাকার ধানমণ্ডি আইডিয়াল কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আল ইমরান, তার এইচএসসি গ্রেড পয়েন্ট ৪.৪০। তার বাবা স্কুল শিক্ষক ইছা রুহুল্লাহ জানান, ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথের দু’টি করে ইউনিউ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি ইউনিট, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি ইউনিট, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি ইউনিট, সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ইউনিট, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাবি অধিভুক্ত সাত কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফরম কেনা, প্রিন্টসহ অন্যান্য বিষয় মিলিয়ে খরচ হয়েছে দশ হাজারের বেশি টাকা।

ইছা রুহুল্লাহ বলেন, 'ছেলের পেছনে টাকা খরচ করতে করতে অবস্থা শেষ। শুধু মাসিক বেতনের টাকা নয়, উল্টো জমানো টাকা থেকে ছেলের জন্য খরচ করতে হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোথাও ভর্তি হতে পারেনি। দুই-এক জায়গায় ওয়েটিংয়ে আছে। সামনে আর মাত্র তিনটি পরীক্ষা।'

খরচের ব্যাপারে ওই অভিভাবক বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেশের বিভিন্ন জেলায় হওয়ায় সেখানে যাওয়া-আসা, পরীক্ষার কমপক্ষে একদিন আগে গিয়ে থাকা, সেখানে খাওয়া-দাওয়া বন্দোবস্ত করতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। আরও দুই-এক জায়গায় পরীক্ষা বাকি আছে। কাজেই মোট অঙ্কটা ৬০ থেকে ৭০ হাজার ছুঁবে। ইমরানের বাবার মতো প্রত্যেক অভিভাবকের অভিব্যক্তি একই রকম।'

[চলবে...]

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.